২০ . ত্বা-হা - ( طه ) | ত্বোয়া-হা
মাক্কী, মোট আয়াতঃ ১৩৫
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
১
طه
তা-হা-
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোয়া-হা। ১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোয়া-হা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তা-হা,
তাফসীরঃ
১. কোন কোন মুফাসসিরের মতে ‘তোয়াহা’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নাম। কেউ বলেন, বিভিন্ন সূরার শুরুতে যে ‘আল-হুরূফুল মুকাত্তাআত’ আছে, طه ও সেই রকমেরই ‘আল-হুরূফুল মুকাত্তাআত’। এর প্রকৃত অর্থ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ জানে না।
২
مَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لِتَشْقَىٰ
মাআনঝালনা-‘আলাইকাল কুরআ-না লিতাশকা।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তোমার প্রতি কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি কষ্ট ভোগ করবে। ২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি ক্লেশ পাবে এজন্যে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করি নাই,
তাফসীরঃ
২. এর দু’টো ব্যাখ্যা হতে পারে। (এক) কাফেরদের পক্ষ হতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে জুলুম ও নির্যাতন করা হত, সেই কষ্টের কথা বলা হয়েছে। এ হিসাবে আয়াতের মর্ম হল, এসব কষ্ট বেশি দিন থাকবে না। অচিরেই আল্লাহ তাআলা এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাবেন এবং আপনাকে বিজয় দান করবেন। (দুই) কোন কোন রিওয়ায়াত দ্বারা জানা যায়, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দিকে সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করতেন। এমনকি তাতে তাঁর মুবারক পা ফুলে যেত। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বলছেন, আপনার এত কষ্ট করার প্রয়োজন নেই। সুতরাং এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর থেকে তিনি রাতের প্রথম অংশে ঘুমাতেন এবং শেষ অংশে ইবাদত করতেন।
৩
إِلَّا تَذْكِرَةً لِّمَن يَخْشَىٰ
ইল্লা-তাযকিরাতাল লিমাইঁইয়াখশা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বরং এটা সেই ব্যক্তির জন্য নসীহত, যে ভয় করে ৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কিন্তু তাদেরই উপদেশের জন্য যারা ভয় করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বরং যে ভয় করে কেবল তার উপদেশার্থে,
তাফসীরঃ
৩. নিজ কাজ-কর্ম সঠিক হচ্ছে কি না, এই ভয় ও চিন্তা যার আছে তার জন্যই এ উপদেশ ফলপ্রসূ হবে। কিংবা বলা যায়, যার অন্তরে সত্য জানার আগ্রহ আছে, জেদের বশবর্তীতে স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন করে না এবং নিজ পরিণাম সম্পর্কে নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকে না, তার মত লোকই এ উপদেশ দ্বারা উপকৃত হয়।
৪
تَنزِيلًا مِّمَّنْ خَلَقَ الْأَرْضَ وَالسَّمَاوَاتِ الْعُلَى
তানঝীলাম মিম্মান খালাকাল আরদা ওয়াছছামা-ওয়া-তিল ‘ঊলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এটা সেই সত্তার পক্ষ হতে অল্প-অল্প করে নাযিল করা হচ্ছে, যিনি পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এটা তাঁর কাছ থেকে অবতীর্ণ, যিনি ভূমন্ডল ও সমুচ্চ নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যিনি পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট হতে এটা অবতীর্ণ।
৫
الرَّحْمَـٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ
আররাহমা-নু‘আলাল ‘আরশিছ তাওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনি অতি দয়াময়, আরশে ‘ইসতিয়াওয়া’ গ্রহণ করেছেন। ৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
দয়াময় র্আশে সমাসীন।
তাফসীরঃ
৪. এর ব্যাখ্যা পূর্বে সূরা আরাফ (৭ : ৫৪)-এর টীকায় চলে গেছে। সেখানে দ্রষ্টব্য।
৬
لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ الثَّرَىٰ
লাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি ওয়ামা- বাইনাহুমা- ওয়ামা তাহতাছছারা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, যা-কিছু আছে এ দুয়ের মাঝখানে। আর যা-কিছু ভূ-গর্ভে আছে সব তাঁরই মালিকানাধীন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নভোমন্ডলে, ভুমন্ডলে, এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং সিক্ত ভূগর্ভে যা আছে, তা তাঁরই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যা আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে, এই দুইয়ের অন্তর্বর্তী স্থানে ও ভ‚গর্ভে তা তাঁরই।
৭
وَإِن تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَإِنَّهُ يَعْلَمُ السِّرَّ وَأَخْفَى
ওয়া ইন তাজহার বিল কাওলি ফাইন্নাহূইয়া‘লামুছছিররা ওয়া আখফা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা যদি কোন কথা উচ্চস্বরে বল (বা নিম্নস্বরে), তবে তিনি তো গুপ্ত ও গুপ্ততম সবই জানেন। ৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যদি তুমি উচ্চকন্ঠেও কথা বল, তিনি তো গুপ্ত ও তদপেক্ষাও গুপ্ত বিষয়বস্তু জানেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সকলই জানেন।
তাফসীরঃ
৫. ‘গুপ্ততম বিষয়’ বলতে মানুষ যা মুখে উচ্চারণ করে না, মনে মনে কল্পনা করে মাত্র, তাই বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মনের সেই অব্যক্ত কথা সম্পর্কেও পরিপূর্ণ অবগত।
৮
اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ
আল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া লাহুল আছমাউল হুছনা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য ইলাহ নেই। সব সৌন্দর্যমন্ডিত নাম তাঁরই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, সুন্দর সুন্দর নাম তাঁরই।
৯
وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ مُوسَىٰ
ওয়াহাল আতা-কা হাদীছুমূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে নবী!) মূসার বৃত্তান্ত কি তোমার কাছে পৌঁছেছে?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনার কাছে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসার বৃত্তান্ত তোমার নিকট পৌঁছেছে কি ?
১০
إِذْ رَأَىٰ نَارًا فَقَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِقَبَسٍ أَوْ أَجِدُ عَلَى النَّارِ هُدًى
ইযরাআ-না-রান ফাকা-লা লিআহলিহিম কুছূ দ্মইন্নীআ-নাছতুনা-রাল লা‘আললীআতীকুম মিনহা-বিকাবাছিন আও আজিদু‘আলান না-রি হুদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যখন সে এক আগুন দেখতে পেয়ে তার পরিবারবর্গকে বলেছিল, তোমরা এখানে থাক। আমি এক আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তা থেকে তোমাদের কাছে কিছু জ্বলন্ত অংগার নিয়ে আসতে পারব কিংবা সে আগুনের কাছে আমি পথের কোন দিশা পেয়ে যাব। ৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি যখন আগুন দেখলেন, তখন পরিবারবর্গকে বললেনঃ তোমরা এখানে অবস্থান কর আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবতঃ আমি তা থেকে তোমাদের কাছে কিছু আগুন জালিয়ে আনতে পারব অথবা আগুনে পৌছে পথের সন্ধান পাব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে যখন আগুন দেখল তখন তার পরিবারবর্গকে বলল, ‘তোমরা এখানে থাক আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্যে তা হতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারিব বা আমি আগুনের নিকটে কোন পথনির্দেশ পাইব।’
তাফসীরঃ
৬. এ আয়াতে ঘটনাটি খুব সংক্ষেপে এসেছে। এটা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, সূরা কাসাসে। সেখানে আছে, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মাদয়ানে দীর্ঘকাল অবস্থান করার পর এক সময় আবার মিসরের উদ্দেশ্যে ওয়াপস রওয়ানা হলেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিল। সিনাই মরুভূমিতে পৌঁছলে তিনি পথ হারিয়ে ফেললেন। খুব শীতও লাগছিল। কোথায় কিভাবে পথের সন্ধান পাওয়া যায় এবং শীত নিবারণেরই বা কী উপায় হতে পারে এজন্য তিনি বড় পেরেশান ছিলেন। এ সময় হঠাৎ দূরে আগুনমত একটা কিছু তাঁর চোখে পড়ল। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল এক নূর, যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাঁকে দেখানো হচ্ছিল। তখন তিনি স্ত্রীকে সেখানে থাকতে বললেন এবং নিজে আগুনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
১১
فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ يَا مُوسَىٰ
ফালাম্মাআতা-হা-নূদিয়া ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যখন সে আগুনের কাছে পৌঁছল, ডাক দেওয়া হল হে মূসা!
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মূসা,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর যখন সে আগুনের নিকট এলো তখন আহ্বান করে বলা হল, ‘হে মূসা!
১২
إِنِّي أَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ ۖ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
ইন্নীআনা রাব্বুকা ফাখলা‘না‘লাইকা ইন্নাকা বিলওয়া-দিল মুকাদ্দাছি তুওয়া।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয় আমিই তোমার প্রতিপালক। ৭ সুতরাং তোমার জুতা খুলে ফেল। কেননা তুমি এখন পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছো। ৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমিই তোমার প্রতিপালক, অতএব তোমার পাদুকা খুলে ফেল, কারণ তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ।
তাফসীরঃ
৭. প্রশ্ন হতে পারে, এ ডাক যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসছিল, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন কি করে? এর উত্তর হল, আল্লাহ তাআলা তাঁর অন্তরে এই প্রতীতি সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, আল্লাহ তাআলারই সাথে তাঁর বাক্যালাপ হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা পারিপার্শ্বিক অবস্থাকেও এই প্রত্যয় সৃষ্টির পক্ষে সহায়ক করে দিয়েছিলেন। কোন কোন রিওয়ায়াত দ্বারা প্রকাশ, তিনি যখন সেই আগুনের কাছে গেলেন, এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে পেলেন, তিনি দেখলেন সে আগুন একটা গাছে শিখাপাত করছে, অথচ কোন একটি পাতা পুড়ছে না। তিনি অপেক্ষা করছিলেন হয়ত কোন স্ফুলিঙ্গ উড়ে তার কাছে আসবে। কিন্তু তাও আসল না। শেষে তিনি কিছু ঘাস-পাতা তুলে নিয়ে তা আগুনের দিকে এগিয়ে দিলেন, যাতে আগুন ধরে। কিন্তু তাতে আগুন ধরল না; বরং আগুন পিছনে সরে গেল। আর তখনই ডাক শোনা গেল ‘হে মূসা...!’ সে আওয়াজ বিশেষ কোন দিক থেকে নয়; বরং চতুর্দিক থেকে অনুভূত হচ্ছিল এবং মূসা আলাইহিস সালামও কেবল কান দ্বারা নয়; বরং সর্বাঙ্গ দ্বারা তা শুনতে পাচ্ছিলেন।
৮. ‘তুওয়া’ তূর পাহাড় সংলগ্ন উপত্যকার নাম। আল্লাহ তাআলা যেসকল স্থানকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন ‘তুওয়া’ উপত্যকাও তার একটি। এর বিশেষ মর্যাদার কারণেই হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে জুতা খুলে ফেলার হুকুম দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া তখন যেহেতু আল্লাহ তাআলার সাথে তাঁর কথোপকথনের সৌভাগ্য লাভ হচ্ছিল, তাই সেটা ছিল আদব ও বিনয় প্রদর্শনের উপযুক্ত সময় আর সে কারণেও জুতা খোলা সমীচীন ছিল।
১৩
وَأَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوحَىٰ
ওয়া আনাখ তারতুকা ফাছতামি‘লিমা-ইউহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তোমাকে (নবুওয়াতের জন্য) মনোনীত করেছি। সুতরাং ওহীর মাধ্যমে তোমাকে যা বলা হচ্ছে মনোযোগ দিয়ে শোন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব যা ওহী প্রেরণ করা হচ্ছে তুমি তা মনোযোগের সঙ্গে শোনো।
১৪
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
ইন্নানীআনাল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লাআনা-ফা‘বুদনী ওয়া আকিমিসসালা-তা লিযিকরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সুতরাং আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমিই আল্লাহ্, আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। অতএব আমার ‘ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।
১৫
إِنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ أَكَادُ أُخْفِيهَا لِتُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا تَسْعَىٰ
ইন্নাছছা-‘আতা আ-তিয়াতুন আকা-দুউখফীহা-লিতুজঝা-কুল্লুনাফছিম বিমা-তাছ‘আ-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই কিয়ামত অবশ্যই আসবে। আমি তা (অর্থাৎ তার সময়) গোপন রাখতে চাই। যাতে প্রত্যেকেই তার কৃতকর্মের প্রতিফল লাভ করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, আমি এটা গোপন রাখতে চাহি যাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে।
১৬
فَلَا يَصُدَّنَّكَ عَنْهَا مَن لَّا يُؤْمِنُ بِهَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَتَرْدَىٰ
ফালা-ইয়াসুদ্দান্নাকা ‘আনহা-মাল লা-ইউ’মিনুবিহা-ওয়াত্তাবা‘আ হাওয়া-হু ফাতারদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং কিয়ামতে বিশ্বাস করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এমন কোন ব্যক্তি যেন তোমাকে তা হতে গাফেল করতে না পারে। তা হলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সুতরাং যে ব্যক্তি কেয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ খাহেশের অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তা থেকে নিবৃত্ত না করে। নিবৃত্ত হলে তুমি ধবংস হয়ে যাবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে এতে বিশ্বাস স্থাপনে নিবৃত্ত না করে, নিবৃত্ত হলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
১৭
وَمَا تِلْكَ بِيَمِينِكَ يَا مُوسَىٰ
ওয়ামা-তিলকা বিইয়ামীনিকা ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে মূসা! তোমার ডান হাতে ওটা কী?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে মূসা, তোমার ডানহাতে ওটা কি?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে মূসা! তোমার দক্ষিণ হস্তে ওটা কী ?’
১৮
قَالَ هِيَ عَصَايَ أَتَوَكَّأُ عَلَيْهَا وَأَهُشُّ بِهَا عَلَىٰ غَنَمِي وَلِيَ فِيهَا مَآرِبُ أُخْرَىٰ
কা-লা হিয়া ‘আসা-ইয়া আতাওয়াক্কাউ ‘আলাইহা-ওয়া আহুশশুবিহা-‘আলা-গানামী ওয়ালিয়া ফীহা-মাআ-রিবুউখরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, এটা আমার লাঠি। আমি এতে ভর করি, এর দ্বারা আমার মেষপালের জন্য (গাছ থেকে) পাতা ঝাড়ি এবং এর দ্বারা আমার অন্যান্য প্রয়োজনও সমাধা হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি বললেনঃ এটা আমার লাঠি, আমি এর উপর ভর দেই এবং এর দ্বারা আমার ছাগপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ঝেড়ে ফেলি এবং এতে আমার অন্যান্য কাজ ও চলে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে বলল, ‘তা আমার লাঠি; আমি এতে ভর দেই এবং এটা দিয়ে আঘাত করে আমি আমার মেষপালের জন্যে বৃক্ষপত্র ফেলিয়া থাকি এবং এটা আমার অন্যান্য কাজেও লাগে।’
১৯
قَالَ أَلْقِهَا يَا مُوسَىٰ
কা-লা আলকিহা-ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনি বললেন, হে মূসা! ওটা নিচে ফেলে দাও।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ বললেন, ‘হে মূসা! তুমি এটা নিক্ষেপ কর।’
২০
فَأَلْقَاهَا فَإِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعَىٰ
ফাআলকা-হা-ফাইযা-হিয়া হাইয়াতুন তাছ‘আ-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা সেটি ফেলে দিল। অমনি সেটা ধাবমান সাপ হয়ে গেল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তিনি তা নিক্ষেপ করলেন, অমনি তা সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর সে তা নিক্ষেপ করল, সঙ্গে সঙ্গে তা সাপ হয়ে ছুটিতে লাগল,
২১
قَالَ خُذْهَا وَلَا تَخَفْ ۖ سَنُعِيدُهَا سِيرَتَهَا الْأُولَىٰ
কা-লা খুযহা-ওয়ালা-তাখাফ ছানু‘ঈদুহা-ছীরাতাহাল ঊলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বললেন, ওটা ধর। ভয় করো না। আমি এখনই ওটা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিচ্ছি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বললেনঃ তুমি তাকে ধর এবং ভয় করো না, আমি এখনি একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি বললেন, ‘তুমি এটাকে ধর, ভয় কর না, আমি এটাকে এটার পূর্বরূপে ফিরিয়ে দিব।
২২
وَاضْمُمْ يَدَكَ إِلَىٰ جَنَاحِكَ تَخْرُجْ بَيْضَاءَ مِنْ غَيْرِ سُوءٍ آيَةً أُخْرَىٰ
ওয়াদমুম ইয়াদাকা ইলা-জানা-হিকা তাখরুজ বাইদায়া মিন গাইরি ছূইন আ-য়াতান উখরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর তোমার হাত নিজ বগলে রাখ। তা কোনরূপ রোগ ছাড়া শুভ্র উজ্জ্বল হয়ে বের হবে। ৯ এটা হবে (তোমার নবুওয়াতের) আরেক নিদর্শন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমার হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক নিদর্শন রূপে; কোন দোষ ছাড়াই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এবং তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, এটা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অপর এক নিদর্শনস্বরূপ।
তাফসীরঃ
৯. অর্থাৎ, বগল থেকে যখন হাত বের করবে, তা শুভ্রতায় ঝলমল করবে। আর সে শুভ্রতা শ্বেতী বা অন্য কোন রোগের কারণে নয়। বরং তা হবে তোমার নবুওয়াত প্রাপ্তির এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
২৩
لِنُرِيَكَ مِنْ آيَاتِنَا الْكُبْرَى
লিনুরিয়াকা মিন আ-য়া-তিনাল কুবরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(এটা করছি) আমার বড় বড় নিদর্শন থেকে কিছু তোমাকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এটা এজন্যে যে, আমি আমার বিরাট নিদর্শনাবলীর কিছু তোমাকে দেখাই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এটা এইজন্যে যে, আমি তোমাকে দেখাব আমার মহানিদর্শনগুলির কিছু।
২৪
اذْهَبْ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
ইযহাব ইলা -ফির‘আওনা ইন্নাহূতাগা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবার ফির‘আউনের কাছে যাও। সে অবাধ্যতায় সীমালংঘন করেছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘ফির‘আওনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করেছে।’
২৫
قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
কা-লা রাব্বিশরাহলী সাদরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ খুলে দিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও।
২৬
وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي
ওয়া ইয়াছছিরলীআমরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং আমার কাজ সহজ করে দিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং আমার কাজ সহজ করে দিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং আমার কর্ম সহজ করে দাও।
২৭
وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي
ওয়াহলুল ‘উকদাতাম মিলিলছা-নী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন। ১০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও-
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads1)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)
তাফসীরঃ
১০. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম শৈশবে এক জ্বলন্ত অঙ্গার মুখে দিয়েছিলেন। তার কারণে তাঁর মুখে কিছুটা তোতলামি ও জড়তা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। তিনি সেটাই দূর করে দেওয়ার দু‘আ করেছেন।
২৮
يَفْقَهُوا قَوْلِي
ইয়াফকাহূকাওলী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাতে মানুষ আমার কথা বুঝতে পারে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যাতে এরা আমার কথা বুঝতে পারে।
২৯
وَاجْعَل لِّي وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِي
ওয়াজ‘আললী ওয়াঝীরাম মিন আহলী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমার স্বজনদের মধ্য হতে একজনকে আমার সহযোগী বানিয়ে দিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমার জন্যে করে দাও একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে;
৩০
هَارُونَ أَخِي
হা-রূনা আখী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমার ভাই হারূনকে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমার ভাই হারুনকে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমার ভাই হারূনকে;
৩১
اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي
উশদুদ বিহীআঝরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তার মাধ্যমে আমার শক্তি দৃঢ় করুন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তার মাধ্যমে আমার কোমর মজবুত করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তার দিয়ে আমার শক্তি সুদৃঢ় কর,
৩২
وَأَشْرِكْهُ فِي أَمْرِي
ওয়া আশরিকহু ফীআমরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তাকে আমার কাজে শরীক বানিয়ে দিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ও তাকে আমার কর্মে অংশী কর,
৩৩
كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيرًا
কাই নুছাব্বিহাকা কাছীরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাতে আমরা বেশি পরিমাণে আপনার তাসবীহ করতে পারি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাতে আমরা বেশী করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করতে পারি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যাতে আমরা তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি প্রচুর;
৩৪
وَنَذْكُرَكَ كَثِيرًا
ওয়ানাযকুরাকা কাছীরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং বেশি পরিমাণে আপনার যিকির করতে পারি। ১১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং বেশী পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তোমাকে স্মরণ করতে পারি অধিক।
তাফসীরঃ
১১. তাসবীহ ও যিকির যদিও একাকীও করা যায়, কিন্তু ভালো সঙ্গী-সাথী পেলে ও পরিবেশ অনুকূল হলে তা যিকিরের পক্ষে সহায়ক হয় ও প্রেরণা যোগায়।
৩৫
إِنَّكَ كُنتَ بِنَا بَصِيرًا
ইন্নাকা কুনতা বিনা-বাসীরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিঃসন্দেহে আপনি আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি তো আমাদের অবস্থা সবই দেখছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তুমি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।’
৩৬
قَالَ قَدْ أُوتِيتَ سُؤْلَكَ يَا مُوسَىٰ
কা-লা কাদ ঊতীতা ছু’লাকা ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বললেন, হে মূসা! তুমি যা-কিছু চেয়েছ তা তোমাকে দেওয়া হল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বললেনঃ হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি বললেন, হে মূসা! তুমি যা চাহিয়াছ তা তোমাকে দেওয়া হল।
৩৭
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَيْكَ مَرَّةً أُخْرَىٰ
ওয়া লাকাদ মানান্না-‘আলাইকা মাররাতান উখরা।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং আমি তো তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং আমি তো তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম;
৩৮
إِذْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّكَ مَا يُوحَىٰ
ইযআওহাইনাইলাউম্মিকা মা-ইউহা।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যখন আমি তোমার মাকে ওহীর মাধ্যমে বলেছিলাম সেই কথা, যা এখন ওহীর মাধ্যমে (তোমাকে) জানানো হচ্ছে
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন আমি তোমার মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যা অতঃপর বর্ণিত হচ্ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যখন আমি তোমার মাতাকে জানিয়েছিলাম যা ছিল জানাবার,
৩৯
أَنِ اقْذِفِيهِ فِي التَّابُوتِ فَاقْذِفِيهِ فِي الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِّي وَعَدُوٌّ لَّهُ ۚ وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَىٰ عَيْنِي
আনিকযিফীহি ফিততা-বূতি ফাকযিফীহি ফিল ইয়াম্মি ফালইউলকিহিল ইয়াম্মুবিছছাহিলি ইয়া’খুযহু ‘আদুওউললী ওয়া ‘আদুওউল্লাহূ ওয়াআলকাইতু‘আলাইকা মাহাব্বাতাম মিন্নী ওয়ালিতুসনা‘আ ‘আলা-‘আইনী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি এ (শিশু)কে সিন্দুকের মধ্যে রাখ। তারপর সিন্দুকটি দরিয়ায় ফেলে দাও। ১২ তারপর দরিয়া সে সিন্দুকটিকে তীরে নিয়ে ফেলে দেবে। তাকে তুলে নেবে আমার এক শত্রু এবং তারও শত্রু। ১৩ আমি আমার পক্ষ হতে তোমার প্রতি ভালোবাসা বর্ষণ করেছিলাম ১৪ আর এসব করেছিলাম এজন্য, যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও। ১৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে, তুমি (মূসাকে) সিন্দুকে রাখ, অতঃপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, অতঃপর দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেবে। তাকে আমার শক্র ও তার শক্র উঠিয়ে নেবে। আমি তোমার প্রতি মহব্বত সঞ্চারিত করেছিলাম আমার নিজের পক্ষ থেকে, যাতে তুমি আমার দৃষ্টির সামনে প্রতি পালিত হও।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যে, তুমি তাকে সিন্দুকের মধ্যে রাখ, এরপর তা দরিয়ায় ভাসাইয়া দাও যাতে দরিয়া একে তীরে ঠেলে দেয়, একে আমার শত্রু ও এর শত্রু নিয়ে যাবে। আমি আমার নিকট হতে তোমার ওপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও।’
তাফসীরঃ
১২. কোন জ্যোতিষী ফির‘আউনকে বলেছিল, বনী ইসরাঈলে এমন এক ব্যক্তির জন্ম হবে, যার হাতে আপনার রাজত্বের অবসান হবে। তাই সে ফরমান জারি করল, এখন থেকে বনী ইসরাঈলে যত শিশু জন্ম নেবে তাদেরকে হত্যা করা হোক। এ রকম পরিস্থিতির ভেতরই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেন। আইন অনুসারে ফির‘আউনের লোকজন তো তাকে হত্যা করে ফেলবে। তাই স্বভাবতই তাঁর মা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা রদ করবে কে? তিনি হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে রক্ষা করার জন্য নিজ কুদরতের মহিমা দেখালেন। তাঁর মাকে ইলহামের মাধ্যমে নির্দেশ দিলেন, শিশুকে একটি সিন্দুকের ভেতর রেখে নীল নদীতে ফেলে দাও।
১৩. আল্লাহ তাআলা যা বলেছিলেন তাই হল। সিন্দুকটি ভাসতে ভাসতে ফির‘আউনের রাজপ্রাসাদের কাছে এসে ঠেকল। ফির‘আউনের কর্মচারীগণ সেটি তুলে দেখল ভেতরে একটি শিশু। তারা কালবিলম্ব না করে শিশুটিকে ফির‘আউনের কাছে নিয়ে আসল। তার স্ত্রী আসিয়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শিশুটির প্রতি তার বড় মায়া ধরে গেল। তিনি তাকে পুত্র হিসেবে লালন-পালন করার জন্য ফির‘আউনকে উদ্বুদ্ধ করলেন।
১৪. আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের চেহারার ভেতর এমন আকর্ষণ দান করেছিলেন যে, যে-কেউ তাঁকে দেখত ভালোবেসে ফেলত। এ কারণেই ফির‘আউনও তাঁকে নিজ প্রাসাদে রাখতে সম্মত হয়ে গেল।
১৫. এমনিতে তো প্রত্যেকেরই প্রতিপালন আল্লাহ তাআলাই করেন। তা সত্ত্বেও হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে লক্ষ্য করে ‘তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হবে’, বলা হয়েছে তার লালন-পালনের বিশেষত্বের কারণে। সাধারণত লালন-পালনের দুনিয়াবী ব্যবস্থা হল, পিতা-মাতা নিজেদের খরচায় ও নিজেদের তত্ত্বাবধানে সন্তানের লালন-পালন করে। কিন্তু হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আল্লাহ তাালা তাঁকে ব্যতিক্রমভাবে সরাসরি নিজ তত্ত্বাবধানে রেখে তাঁর শত্রুর মাধ্যমে প্রতিপালন করিয়েছেন।
৪০
إِذْ تَمْشِي أُخْتُكَ فَتَقُولُ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ مَن يَكْفُلُهُ ۖ فَرَجَعْنَاكَ إِلَىٰ أُمِّكَ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ ۚ وَقَتَلْتَ نَفْسًا فَنَجَّيْنَاكَ مِنَ الْغَمِّ وَفَتَنَّاكَ فُتُونًا ۚ فَلَبِثْتَ سِنِينَ فِي أَهْلِ مَدْيَنَ ثُمَّ جِئْتَ عَلَىٰ قَدَرٍ يَا مُوسَىٰ
ইযতামশীউখতুকা ফাতাকূলুহাল আদুল্লুকুম ‘আলা-মাইঁ ইয়াকফুলুহূ ফারাজা‘না-কা ইলাউম্মিকা কাই তাকাররা ‘আইনুহা-ওয়ালা-তাহঝানা ওয়াকাতালতা নাফছান ফানাজ্জাইনা-কা মিনাল গাম্মি ওয়া ফাতান্না-কা ফুতূনা- ফালাবিছতা ছিনীনা ফী আহলি মাদইয়ানা ছু ম্মা জি’তা ‘আলা-কাদারিইঁ ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই সময়ের কথা চিন্তা কর, যখন তোমার বোন ঘর থেকে বের হয়ে চলছে তারপর (ফিরাউনের কর্মচারীদেরকে) বলছে, আমি কি তোমাদেরকে এমন কারো সন্ধান দেব, যে একে লালন-পালন করবে? ১৬ এভাবে আমি তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে চিন্তিত না থাকে। তুমি এক ব্যক্তিকে মেরে ফেলেছিলে। ১৭ তারপর আমি তোমাকে সে সংকট থেকে উদ্ধার করি। আর আমি তোমাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করি। ১৮ তারপর তুমি কয়েক বছর মাদয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থান করলে। তারপর হে মূসা! এমন এক সময় এখানে আসলে, যা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন তোমার ভগিনী এসে বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব কে তাকে লালন পালন করবে। অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মাতার কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু শীতল হয় এবং দুঃখ না পায়। তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, অতঃপর আমি তোমাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেই; আমি তোমাকে অনেক পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ান বাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছিলে; হে মূসা, অতঃপর তুমি নির্ধারিত সময়ে এসেছ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যখন তোমার ভগ্নী এসে বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব কে এই শিশুর ভার নিবে?’ তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়; এবং তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে; এরপর আমি তোমাকে মনঃপীড়া হতে মুক্তি দেই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করেছি। এরপর তুমি কয়েক বৎসর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে, হে মূসা! এটার পরে তুমি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলে।
তাফসীরঃ
১৬. ফির‘আউনের স্ত্রী তো শিশুটিকে লালন-পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল তার দুধ পান করানো নিয়ে। কত ধাত্রীই তালাশ করে আনা হল, কিন্তু হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কোন ধাত্রীরই দুধ মুখে নিচ্ছিলেন না। হযরত আসিয়া এমন কোন মহিলাকে খুঁজে আনার জন্য দাসীদেরকে পাঠিয়ে দিলেন, যার দুধ তিনি গ্রহণ করতে পারেন। ওদিকে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মা সন্তানকে নদীতে তো ফেলে দিলেন, কিন্তু এরপর কী হবে সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন। তিনি মূসা আলাইহিস সালামের বোনকে অনুসন্ধানের জন্য পাঠালেন। তিনি খুঁজতে খুঁজতে ফির‘আউনের রাজপ্রাসাদে গিয়ে পৌঁছলেন। সেখানে পৌঁছে দেখেন তারা শিশুটিকে দুধ পান করানো নিয়ে ঝামেলায় পড়ে গেছে। দাসীরা উপযুক্ত ধাত্রীর সন্ধানে ছোটাছুটি করছে। তিনি সুযোগ পেয়ে গেলেন এবং এ দায়িত্ব তার মায়ের উপর ন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়ে দিলেন। তারপর আর দেরি না করে মাকে সেখানে নিয়েও আসলেন। তিনি যখন দুধ পান করানোর ইচ্ছায় শিশুটিকে বুকে নিলেন অমনি সে মহানন্দে দুধ পান করতে লাগল। এভাবে আল্লাহ তাআলা নিজ ওয়াদা অনুযায়ী তাকে পুনরায় মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন।
১৭. এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে সূরা কাসাসে আসবে। ঘটনার সারমর্ম হল, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এক মজলুম ইসরাঈলীকে সাহায্য করতে গিয়ে জালেমকে একটা ঘুসি মেরেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাকে জুলুম থেকে নিবৃত্ত করা, মেরে ফেলা নয়। কিন্তু সেই এক ঘুসিতে লোকটা মরেই গেল।
১৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) একটি দীর্ঘ রেওয়ায়াতে সেসব পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনে কাসীর (রহ.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে রিওয়ায়াতটি উদ্ধৃত করেছেন। মাআরিফুল কুরআনে (৫ম খণ্ড, ৮৪-১০৩) তার পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ তুলে দেওয়া হয়েছে।
৪১
وَاصْطَنَعْتُكَ لِنَفْسِي
ওয়াছতানা‘তুকা লিনাফছী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং আমি তোমাকে বিশেষভাবে আমার জন্য তৈরি করেছি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য তৈরী করে নিয়েছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্যে প্রস্তুত করে নিয়েছি।
৪২
اذْهَبْ أَنتَ وَأَخُوكَ بِآيَاتِي وَلَا تَنِيَا فِي ذِكْرِي
ইযহাব আনতা ওয়াআখূকা বিআ-য়া-তী ওয়ালা-তানিয়া-ফী যিকরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনসমূহ নিয়ে যাও এবং আমার যিকিরে শৈথিল্য করো না। ১৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনসহ যাত্রা কর এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য কর না,
তাফসীরঃ
১৯. এখানে সবক দেওয়া উদ্দেশ্য যে, সত্যের দাওয়াতদাতাকে সর্বদা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। সব সংকটে সাহায্য চাইতে হবে কেবল তাঁরই কাছে।
৪৩
اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
ইয হাবা ইলা-ফির‘আওনা ইন্নাহূতাগা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
উভয়ে ফির‘আউনের কাছে যাও। সে সীমালংঘন করেছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তোমরা উভয়ে ফির‘আওনের নিকট যাও, সে তো সীমা-লংঘন করেছে।
৪৪
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
ফাকূলা-লাহূকাওলাল লাইয়িনাল লা‘আল্লাহূইয়াতাযাক্কারুআও ইয়াখশা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা গিয়ে তার সাথে নম্র কথা বলবে। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা (আল্লাহকে) ভয় করবে। ২০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তোমরা তাকে নম্র কথা বল, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তোমরা তার সঙ্গে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে বা ভয় করবে।’
তাফসীরঃ
২০. এর দ্বারা দাওয়াতের পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। দাওয়াতের ভাষা হতে হবে নম্র, আকর্ষণীয় ও দরদপূর্ণ। মনে আঘাত দিয়ে কথা বলা যাবে না ও অসম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। যত বড় উদ্ধত ব্যক্তিই হোক এই আশায় তাকে নম্র-কোমল ভাষায় দাওয়াত দিতে হবে যে, আল্লাহর মেহেরবানীতে হয়ত তার মন গলবে এবং উপদেশ গ্রহণ করবে কিংবা আল্লাহ তাআলার অপার শক্তি-ক্ষমতা ও তাঁর কঠিন শাস্তির কথা চিন্তা করে কিছুটা হলেও নত ও ভীত হবে। -অনুবাদক
৪৫
قَالَا رَبَّنَا إِنَّنَا نَخَافُ أَن يَفْرُطَ عَلَيْنَا أَوْ أَن يَطْغَىٰ
কা-লা রাব্বানাইন্নানা-নাখা-ফুআইঁ ইয়াফরুতা ‘আলাইনাআও আইঁ ইয়াতগা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আশঙ্কা করি সে কিনা আমাদের উপর অত্যাচার করে অথবা সীমালংঘন করতে উদ্যত হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের প্রতি জুলুম করবে কিংবা উত্তেজিত হয়ে উঠবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আশংকা করি সে আমাদের ওপর বাড়াবাড়ি করবে বা অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করবে।’
৪৬
قَالَ لَا تَخَافَا ۖ إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَىٰ
কা-লা লা-তাখা-ফাইন্নানী মা‘আকুমাআছমা‘উ ওয়া আরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বললেন, ভয় করো না। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। আমি শুনি ও দেখি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বললেনঃ তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি শুনি ও দেখি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি বললেন, ‘তোমরা ভয় কর না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও আমি দেখি।’
৪৭
فَأْتِيَاهُ فَقُولَا إِنَّا رَسُولَا رَبِّكَ فَأَرْسِلْ مَعَنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَا تُعَذِّبْهُمْ ۖ قَدْ جِئْنَاكَ بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكَ ۖ وَالسَّلَامُ عَلَىٰ مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَىٰ
ফা’তিয়া-হু ফাকূলাইন্না-রাছূলা-রাব্বিকা ফাআরছিল মা‘আনা বানি ইসরাইলা ওয়ালা তুআযযিবহুম ক্বাদ জি'নাকা বিআয়াতিম মির রাব্বিকা ওয়াস্সালামু আ'লা মানিত্যাবাআলহুদা।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং তোমরা তার কাছে যাও এবং বল, আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসূল। কাজেই বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও এবং তাদেরকে শাস্তি দিও না। আমরা তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের নিদর্শন নিয়ে এসেছি। আর শান্তি তো তাদেরই প্রতি, যারা হিদায়াত অনুসরণ করে। ২১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব তোমরা তার কাছে যাও এবং বলঃ আমরা উভয়েই তোমার পালনকর্তার প্রেরিত রসূল, অতএব আমাদের সাথে বনী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে নিপীড়ন করো না। আমরা তোমার পালনকর্তার কাছ থেকে নিদর্শন নিয়ে তোমার কাছে আগমন করেছি। এবং যে সৎপথ অনুসরণ করে, তার প্রতি শান্তি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং বল, ‘আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসূল, সুতরাং আমাদের সঙ্গে বনী ইস্রাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিও না, আমরা তো তোমার নিকট এনেছি তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে নিদর্শন এবং শান্তি তাদের প্রতি যারা অনুসরণ করে সৎপথ।
তাফসীরঃ
২১. এ আয়াতে তিনটি বিষয়ের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে (ক) ফিরআউন ও সমস্ত মাখলুকের একজন সৃষ্টিকর্তা ও মালিক আছেন, যিনি মানুষের হিদায়াতের জন্য রাসূল পাঠিয়ে থাকেন। (খ) আমরা দু’জন তাঁর রাসূল বিধায় আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহ তাআলার ‘ইবাদত-আনুগত্য করা তোমাদের অবশ্যকর্তব্য। (গ) বনী ইসরাঈল একটি স্বাধীন মানবগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও তোমরা জোরপূর্বক তাদেরকে দাস বানিয়ে রেখেছ। এটা তাদের প্রতি চরম অবিচার। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হল তোমরা তাদেরকে এই অন্যায় দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের হাতে সমর্পণ কর। তারা তাদের যেখানে ইচ্ছা স্বাধীন জীবন যাপন করুক (-অনুবাদক তাফসীরে উসমানী অবলম্বনে)।
৪৮
إِنَّا قَدْ أُوحِيَ إِلَيْنَا أَنَّ الْعَذَابَ عَلَىٰ مَن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ
ইন্না-কাদ ঊহিয়া ইলাইনাআন্নাল ‘আযা-বা ‘আলা-মান কাযযাবা ওয়া তাওয়াল্লা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমাদের প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, শাস্তি হবে সেই ব্যক্তির উপর, যে (সত্যকে) অস্বীকার করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমরা ওহী লাভ করেছি যে, যে ব্যক্তি মিথ্যারোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার উপর আযাব পড়বে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তো তার জন্যে, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।’
৪৯
قَالَ فَمَن رَّبُّكُمَا يَا مُوسَىٰ
কা-লা ফামার রাব্বুকুমা-ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(এসব কথা শুনে) ফির‘আউন বলল, হে মূসা! তোমাদের রব্ব কে?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে বললঃ তবে হে মূসা, তোমাদের পালনকর্তা কে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ফির‘আওন বলল, ‘হে মূসা! কে তোমাদের প্রতিপালক ?’
৫০
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ
কা-লা রাব্বুনাল্লাযীআ‘তা-কুল্লা শাইয়িন খালকাহূছুম্মা হাদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, আমাদের রব্ব তো তিনি, যিনি প্রত্যেককে তার উপযুক্ত আকৃতি দিয়েছেন, তারপর তার পথ প্রদর্শনও করেছেন। ২২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললেনঃ আমাদের পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, এরপর পথনির্দেশ করেছেন।’
তাফসীরঃ
২২. অর্থাৎ প্রতিটি সৃষ্টির গঠন-প্রকৃতির মধ্যে আল্লাহ তাআলার কুদরত ও হিকমতের মাহাত্ম্য বিদ্যমান। তিনি যাকে যেই আদলে সৃষ্টি করেছেন, সে মোতাবেক নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়ার নিয়ম-নীতিও শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন জগতে আলো ও তাপ সরবরাহের জন্য সূর্যকে এক বিশেষ আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেই আকৃতি অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের জন্য তার দরকার ছিল সৌর জাগতিক সুনির্দিষ্ট নিয়মে আপন কক্ষপথে আবর্তিত হতে থাকা। আল্লাহ তাআলা তাকে তা শিখিয়ে দিয়েছেন। এভাবে প্রত্যেক প্রাণীকে শিক্ষা দিয়েছেন সে কিভাবে চলবে এবং কিভাবে নিজ জীবিকা সংগ্রহ করবে। মাছের পোনা পানিতে জন্ম নেয় এবং সঙ্গে-সঙ্গে সাতারও কাটে। এটা তাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? পাখীরা হাওয়ায় ওড়ার তালীম কার কাছে পেয়েছে? মোদ্দাকথা প্রতিটি মাখলুককে তার গঠন-প্রকৃতি অনুযায়ী জীবিত থাকা ও জীবনের রসদ সংগ্রহ করার নিয়ম আল্লাহ তাআলাই শিক্ষা দান করেছেন।
৫১
قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُونِ الْأُولَىٰ
কা-লা ফামা-বা-লুল কুরূনিল ঊলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ফিরাউন বলল, তাহলে পূর্বে যেসব জাতি গত হয়েছে তাদের অবস্থা কী? ২৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ফেরাউন বললঃ তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কি?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ফির‘আওন বলল, ‘তা হলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী ?’
তাফসীরঃ
২৩. এ প্রশ্ন দ্বারা ফির‘আউন বোঝাতে চাচ্ছিল, আমার আগে এমন বহু জাতি গত হয়েছে, যারা তাওহীদে বিশ্বাসী ছিল না, তা সত্ত্বেও তারা যত দিন জীবিত ছিল তাদের উপর কোন আযাব আসেনি। তাওহীদকে অস্বীকার করার কারণে মানুষ যদি আল্লাহর পক্ষ হতে শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যায়, তবে তাদের উপর শাস্তি আসল না কেন? হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ব্যক্তিকে জানেন এবং কে কি কাজ করে তাও তার ভালোভাবেই জানা আছে। তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী ফায়সালা করেন যারা সত্য অস্বীকার করে তাদের মধ্যে কাকে ইহকালেই শাস্তি দেওয়া হবে এবং কার শাস্তি আখেরাতের জন্য মওকুফ রাখা হবে। যদি কোন কাফের সম্প্রদায় দুনিয়ায় নিরাপদ জীবন কাটিয়ে যায় এবং এখানে কোন শাস্তির সম্মুখীন না হয, তবে তার অর্থ এ নয় যে, সে শাস্তি হতে বেঁচে গেছে এবং আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দিতে ভুলে গেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। বরং তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী দুনিয়ায় তাকে শাস্তি না দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে শাস্তি দিবেন আখেরাতে জাহান্নামের আগুনে।
৫২
قَالَ عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَابٍ ۖ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى
কা-লা ‘ইলমুহা-‘ইনদা রাববী ফী কিতা-বিল লা-ইয়াদিল্লুরাববী ওয়ালা-ইয়ানছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, তাদের জ্ঞান আমার প্রতিপালকের কাছে এক কিতাবে সংরক্ষিত আছে। আমার রব্বের কোন বিভ্রান্তি দেখা দেয় না এবং তিনি ভুলেও যান না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললেনঃ তাদের খবর আমার পালনকর্তার কাছে লিখিত আছে। আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হন না এং বিস্মৃতও হন না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘এটার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট কিতাবে রয়েছে, আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং বিস্মৃতও হন না।’
৫৩
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَسَلَكَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّن نَّبَاتٍ شَتَّىٰ
আল্লাযী জা‘আলা লাকুমুল আরদা মাহদাওঁ ওয়া ছালাকা লাকুম ফীহা ছুবুলাওঁ ওয়া আনঝালা মিনাছছামাই মাআন ফাআখরাজনা-বিহীআঝওয়া-জাম মিন নাবা-তিন শাত্তা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনি সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা বানিয়েছেন, তাতে তোমাদের জন্য চলার পথ দিয়েছেন এবং আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেছেন। তারপর আমি তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং এতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলার পথ, তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন।’ এবং আমি তা দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।
৫৪
كُلُوا وَارْعَوْا أَنْعَامَكُمْ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّأُولِي النُّهَىٰ
কুলূওয়ার‘আও আন ‘আ-মাকুম ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিল লিউলিন নুহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা নিজেরাও তা খাও এবং তোমাদের গবাদি পশুকেও চরাও। নিশ্চয়ই এসব বিষয়ের মধ্যে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন আছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা আহার কর এবং তোমাদের চতুস্পদ জন্তু চরাও। নিশ্চয় এতে বিবেক বানদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা আহার কর ও তোমাদের গবাদিপশু চরাও; অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্যে।
৫৫
۞ مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ
মিনহা-খালাকনা-কুম ওয়া ফীহা-নু‘ঈদুকুম ওয়ামিনহা-নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তোমাদেরকে এ মাটি হতেই সৃষ্টি করেছি, এর মধ্যে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব এবং পুনরায় তোমাদেরকে এরই মধ্য হতে বের করব।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি মৃত্তিকা হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং তা হতে পুনর্বার তোমাদেরকে বের করব।
৫৬
وَلَقَدْ أَرَيْنَاهُ آيَاتِنَا كُلَّهَا فَكَذَّبَ وَأَبَىٰ
ওয়ালাকাদ আরাইনা-হু আ-য়া-তিনা-কুল্লাহা-ফাকাযযাবা ওয়া আবা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত আমি তাকে (অর্থাৎ ফির‘আউনকে) আমার সমস্ত নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু সে কেবল অস্বীকারই করেছে ও অমান্য করেছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি ফেরাউনকে আমার সব নিদর্শন দেখিয়ে দিয়েছি, অতঃপর সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো তাকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখিয়েছিলাম; কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করেছে ও অমান্য করেছে।
৫৭
قَالَ أَجِئْتَنَا لِتُخْرِجَنَا مِنْ أَرْضِنَا بِسِحْرِكَ يَا مُوسَىٰ
কা-লা আজি‘তানা-লিতুখরিজানা-মিন আরদিনা-বিছিহরিকা ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে বলল, হে মূসা! তুমি কি আমাদের কাছে এজন্যই এসেছ যে, তোমার যাদু দ্বারা আমাদেরকে আমাদের ভূমি থেকে বের করে দেবে?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে বললঃ হে মূসা, তুমি কি যাদুর জোরে আমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার জন্যে আগমন করেছ?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে বলল, ‘হে মূসা! তুমি কি আমাদের নিকট এসেছো তোমার জাদু দিয়ে আমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করে দিবার জন্যে ?
৫৮
فَلَنَأْتِيَنَّكَ بِسِحْرٍ مِّثْلِهِ فَاجْعَلْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ مَوْعِدًا لَّا نُخْلِفُهُ نَحْنُ وَلَا أَنتَ مَكَانًا سُوًى
ফালানা’তিয়ান্নাকা বিছিহরিম মিছলিহী ফাজ‘আল বাইনানা-ওয়া বাইনাকা মাও‘ইদাল লানুখলিফুহূনাহনুওয়ালাআনতা মাকা-নান ছুওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ঠিক আছে, আমরাও তোমার সামনে অবশ্যই অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে কোন উন্মুক্ত স্থানে পরস্পরে মুকাবেলা করার জন্য একটা সময় নির্দিষ্ট কর, যার ব্যতিক্রম আমরাও করব না এবং তুমিও না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, আমরাও তোমার মোকাবেলায় তোমার নিকট অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে একটি ওয়াদার দিন ঠিক কর, যার খেলাফ আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না একটি পরিষ্কার প্রান্তরে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট উপস্থিত করব এটার অনুরূপ জাদু, সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে নির্ধারণ কর এক নির্দিষ্ট সময় এক মধ্যবর্তী স্থানে, যার ব্যতিক্রম আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না।’
৫৯
قَالَ مَوْعِدُكُمْ يَوْمُ الزِّينَةِ وَأَن يُحْشَرَ النَّاسُ ضُحًى
কা-লা মাও‘ইদুকুম ইয়াওমুঝ ঝীনাতি ওয়া আইঁ ইউহশারান্না-ছুদু হা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, যে দিন আনন্দ উদযাপন করা হয়, ২৪ তোমাদের সাথে সে দিনই স্থিরীকৃত রইল এবং এটা স্থির থাকল যে, দিন চড়ে ওঠা মাত্রই মানুষকে সমবেত করা হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললঃ তোমাদের ওয়াদার দিন উৎসবের দিন এবং পূর্বাহেߠলোকজন সমবেত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং যেই দিন পূর্বাহ্নে জনগণকে সমবেত করা হবে।’
তাফসীরঃ
২৪. এটা কোন উৎসবের দিন ছিল, যে দিন ফির‘আউনের সম্প্রদায় আনন্দ উদযাপন করত। সে দিন যেহেতু প্রচুর লোক সমাগম হয়, তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এ দিনকেই বেছে নিলেন, যাতে উপস্থিত জনম-লীর সামনে সত্যকে পরিস্ফুট করা যায় এবং সত্যের জয় সকলে সচক্ষে দেখতে পায়।
৬০
فَتَوَلَّىٰ فِرْعَوْنُ فَجَمَعَ كَيْدَهُ ثُمَّ أَتَىٰ
ফাতাওয়াল্লা-ফির‘আওনুফাজামা‘আ কাইদাহূছুম্মা আতা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর ফির‘আউন (নিজ জায়গায়) চলে গেল এবং সে নিজ কৌশলসমূহ একাট্টা করল। তারপর (মুকাবেলার জন্য) উপস্থিত হল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর ফেরাউন প্রস্থান করল এবং তার সব কলাকৌশল জমা করল অতঃপর উপস্থিত হল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর ফির‘আওন উঠিয়া গেল এবং পরে তার কৌশলসমূহ একত্র করল, এরপর এলো।
৬১
قَالَ لَهُم مُّوسَىٰ وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُم بِعَذَابٍ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرَىٰ
কা-লা লাহুম মূছা-ওয়াইলাকুম লা-তাফতারূ‘আলাল্লা-হি কাযিবান ফাইউছহিতাকুম বি‘আযা-বিওঁ ওয়া কাদ খা-বা মানিফতারা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা তাদেরকে (অর্থাৎ যাদুকরদেরকে) বলল ২৫, আফসোস তোমাদের প্রতি! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। ২৬ তা করলে তিনি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দ্বারা নির্মূল করে ফেলবেন। আর যে-কেউ মিথ্যা আরোপ করে, সে নিশ্চিতভাবে ব্যর্থকাম হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ দুর্ভাগ্য তোমাদের; তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। তাহলে তিনি তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ধবংস করে দেবেন। যে মিথ্যা উদভাবন করে, সেই বিফল মনোরথ হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা এদেরকে বলল, ‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহ্ র প্রতি মিথ্যা আরোপ কর না। করলে, তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে সমূলে ধ্বংস করবেন। যে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে সে-ই ব্যর্থ হয়েছে।’
তাফসীরঃ
২৫. অর্থাৎ প্রথমেই তিনি নবীসুলভ দায়িত্বপালনে অবতীর্ণ হলেন। প্রতিযোগিতায় জেতা তো বড় কথা নয়; মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ দেখানোই তার আসল কাজ। সুতরাং প্রথমে তিনি তাদেরকে দাওয়াত দিলেন। কুফর ও মিথ্যাচারের অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করলেন, যাতে তারা হিদায়াত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। -অনুবাদক
২৬. অর্থাৎ, কুফরের পথ অবলম্বন করো না। কেননা কুফরের সব আকীদা-বিশ্বাসই ভ্রান্ত এবং তা আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যারোপের নামান্তর।
৬২
فَتَنَازَعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ وَأَسَرُّوا النَّجْوَىٰ
ফাতানা-ঝা‘ঊআমরাহুম বাইনাহুম ওয়া আছাররুন নাজওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এর ফলে তাদের মধ্যে নিজেদের করণীয় বিষয়ে বিরোধ দেখা দিল। তারা চুপিসারে পরামর্শ করতে লাগল। ২৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তারা তাদের কাজে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করল এবং গোপনে পরামর্শ করল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করল এবং এরা গোপনে পরামর্শ করল।
তাফসীরঃ
২৭. হযরত মূসা আলাইহিস সালামের উপদেশ তাদের কারও কারও মনে রেখাপাত করল। তাই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে তারা করণীয় স্থির করার জন্য নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতে বসল। কেউ কেউ বলল, তাকে তো ঠিক যাদুকর বলে মনে হয় না। আবার কেউ যাদুকর হওয়ার পক্ষেই মত দিল। তাদের সামনে ফির‘আউনের রাজকীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি ও প্রলোভনের ব্যাপারটা তো ছিলই। শেষে তারা তাঁর যাদুকর হওয়ার পক্ষেই ঐকমত্য প্রকাশ করল। এ ব্যাপারে যে বিবৃতি তারা দিল, পরের আয়াতে তা ব্যক্ত হয়েছে। -অনুবাদক
৬৩
قَالُوا إِنْ هَـٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيدَانِ أَن يُخْرِجَاكُم مِّنْ أَرْضِكُم بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ الْمُثْلَىٰ
কা-লূইন হা-যা-নি লাছা-হিরা-নি ইউরীদা-নি আইঁ ইউখরিজা-কুমমিনআরদিকুম বিছিহরিহিমা-ওয়া ইয়াযহাবা -বিতারীকাতিকুমুল মুছলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(পরিশেষে) তারা বলল, নিশ্চয়ই এ দু’জন (অর্থাৎ মূসা ও হারূন) যাদুকর। তারা চায় তোমাদেরকে তোমাদের ভূমি থেকে উৎখাত করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট (ধর্ম) ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ এই দুইজন নিশ্চিতই যাদুকর, তারা তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায় এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা রহিত করতে চায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলল, ‘এই দু’জন অবশ্যই জাদুকর, তারা চায় তাদের জাদু দিয়ে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন-ব্যবস্থা ধ্বংস করতে।
৬৪
فَأَجْمِعُوا كَيْدَكُمْ ثُمَّ ائْتُوا صَفًّا ۚ وَقَدْ أَفْلَحَ الْيَوْمَ مَنِ اسْتَعْلَىٰ
ফাআজমি‘উ কাইদাকুম ছুম্মা’তূসাফফাওঁ ওয়াকাদ আফলাহাল ইয়াওমা মানিছতা‘লা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং তোমরা তোমাদের কৌশল সংহত করে নাও, তারপর সারিবদ্ধ হয়ে এসে যাও। নিশ্চিত জেন, আজ যে জয়ী হবে সেই সফলতা লাভ করবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, তোমরা তোমাদের কলাকৌশল সুসংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হয়ে আস। আজ যে জয়ী হবে, সেই সফলকাম হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘অতএব তোমরা তোমাদের জাদুক্রিয়া সংহত কর, এরপর সারিবদ্ধ হয়ে উপস্থিত হও এবং যে আজ জয়ী হবে সে-ই সফল হবে।’
৬৫
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَن تُلْقِيَ وَإِمَّا أَن نَّكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَىٰ
কা-লূইয়া-মূছাইম্মাআন তুলকিয়া ওয়া ইম্মাআন নাকূনা আওয়ালা মান আলকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাদুকরগণ বলল, হে মূসা! হয় তুমি আগে (নিজ লাঠি) নিক্ষেপ কর অথবা প্রথমে আমরাই নিক্ষেপ করি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলল, ‘হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর বা প্রথমে আমরাই নিক্ষেপ করি।’
৬৬
قَالَ بَلْ أَلْقُوا ۖ فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِن سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَىٰ
কা-লা বাল আলকূ,ফাইযা- হিবা-লুহুম ওয়া ‘ইসিইউহুম ইউখাইইয়ালুইলাইহি মিন ছিহরিহিম আন্নাহা-তাছ‘আ-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। অতঃপর তাদের যাদু ক্রিয়ায় হঠাৎ মূসার মনে হয়, তাদের রশি ও লাঠিগুলো ছোটাছুটি করছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললেনঃ বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হল, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো চুটাছুটি করছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ এদের জাদু-প্রভাবে অকস্মাৎ মূসার মনে হল এদের দড়ি ও লাঠিগুলি ছুটাছুটি করতেছে।
৬৭
فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُّوسَىٰ
ফাআওজাছা ফী নাফছিহী খীফাতাম মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ফলে মূসা তার অন্তরে কিছুটা ভীতি অনুভব করল। ২৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করল।
তাফসীরঃ
২৮. এ ভয় ছিল স্বভাবগত। যাদুকরেরা যে ভেল্কিবাজী দেখিয়েছিল, আপাতদৃষ্টিতে যেহেতু তা অনেকটা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের দেখানো মুজিযার অনুরূপ ছিল, তাই পাছে লোকজন তাঁর মুজিযাকেও যাদু মনে করে বসে এ ভাবনাই হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মনে দেখা দিয়েছিল। তার ভয় ছিল এখানেই।
৬৮
قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنتَ الْأَعْلَىٰ
কুলনা- লা-তাখাফ ইন্নাকা আনতাল আ‘লা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি বললাম, ভয় করো না। নিশ্চিত থাক তুমিই উপরে থাকবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমি বিজয়ী হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি বললাম, ‘ভয় কর না, তুমিই প্রবল।’
৬৯
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ
ওয়া আল কিমা-ফী ইয়ামীনিকা তালকাফ মা-সানা‘ঊ ইন্নামা-সানা‘ঊ কাইদুছাহিরিওঁ ওয়ালা-ইউফলিহুছছা-হিরু হাইছুআতা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমার ডান হাতে যা (অর্থাৎ যে লাঠি) আছে, তা (মাটিতে) নিক্ষেপ কর। সেটি তারা যে কারসাজি করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে। তাদের যাবতীয় কারসাজি তো যাদুকরের ভেল্কি মাত্র। যাদুকর যেখানেই যাক, সফলকাম হবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ কর। এটা যা কিছু তারা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তা তো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তোমার দক্ষিণ হস্তে যা আছে তা নিক্ষেপ কর, এটা এরা যা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে। এরা যা করেছে তা তো কেবল জাদুকরের কৌশল। জাদুকর যেখানেই আসুক, সফল হবে না।’
৭০
فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ هَارُونَ وَمُوسَىٰ
ফাউলকিয়াছ ছাহারাতুছুজ্জাদান কা-লূআ-মান্না-বিরাব্বি হা-রূনা ওয়া মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং (তাই হল এবং) সমস্ত যাদুকরকে সিজদায় পাতিত করা হল। ২৯ তারা বলতে লাগল আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। তারা বললঃ আমরা হারুন ও মূসার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর জাদুকরেরা সিজদাবনত হল ও বলল, ‘আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম।’
তাফসীরঃ
২৯. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন তাঁর লাঠিটি মাটিতে ফেললেন, অমনি সেটি আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রুতি অনুসারে বিরাট অজগর হয়ে গেল এবং যাদুকরেরা যে অলীক সাপ তৈরি করেছিল সেগুলোকে এক-এক করে গিলে ফেলল। এ অবস্থা দেখে যাদুকরগণ নিশ্চিত হয়ে গেল, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কোন যাদুকর নন; বরং তিনি আল্লাহ তাআলার রাসূল। এই উপলব্ধি হওয়া মাত্র তারা সিজদায় পড়ে গেল। লক্ষ্যণীয় যে, এস্থলে কুরআন মাজীদে ‘তারা সিজদায় পড়ে গেল’ না বলে বলা হয়েছে ‘তাদেরকে সিজদায় পাতিত করা হল’। ইঙ্গিত এ বিষয়ের দিকে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের দেখানো মুজিযা এমন শক্তিশালী ছিল এবং তার প্রভাব এমন অপ্রতিরোধ্য ছিল, যা দেখার পর তাদের পক্ষে সিজদা না করে থাকা সম্ভব ছিল না। যেন সেই মুজিযাই তাদেরকে সিজদা করাল।
৭১
قَالَ آمَنتُمْ لَهُ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّهُ لَكَبِيرُكُمُ الَّذِي عَلَّمَكُمُ السِّحْرَ ۖ فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَافٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ فِي جُذُوعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ أَيُّنَا أَشَدُّ عَذَابًا وَأَبْقَىٰ
কা-লা আ-মানতুম লাহূ কাবলা আন আ-যানা লাকুম ইন্নাহূ লাকাবীরুকুমুল্লাযী ‘আল্লামাকুমুছ ছিহরা ফালাউকাত্তি‘আন্না আইদিয়াকুম ওয়া আরজুলাকুম মিন খিলা-ফিওঁ ওয়ালা উসালিলবান্নাকুম ফী জুযূ‘ইন নাখলি ওয়ালা তা‘লামুন্না আইঁ ইউনাআশাদ্দু‘আযাবাওঁ ওয়াআবকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ফিরাউন বলল, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে! আমার বিশ্বাস সেই (অর্থাৎ মূসা) তোমাদের দলপতি, যে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমিও সংকল্প স্থির করেছি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং তোমাদেরকে খেজুর গাছের কা-ে শূলে চড়াব। তোমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারবে আমাদের দু’জনের মধ্যে কার শাস্তি বেশি কঠিন ও বেশি স্থায়ী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ফেরাউন বললঃ আমার অনুমতি দানের পূর্বেই? তোমরা কি তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে; দেখছি সেই তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতএব আমি অবশ্যই তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করব এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কান্ডে শূলে চড়াব এবং তোমরা নিশ্চিত রূপেই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার আযাব কঠোরতর এবং অধিক্ষণ স্থায়ী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ফির‘আওন বলল, ‘কী, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই তোমরা মূসাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে! দেখতেছি, সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তো তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কাণ্ডে শূলবিদ্ধ করবই এবং তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কাহার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।’
৭২
قَالُوا لَن نُّؤْثِرَكَ عَلَىٰ مَا جَاءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِي فَطَرَنَا ۖ فَاقْضِ مَا أَنتَ قَاضٍ ۖ إِنَّمَا تَقْضِي هَـٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
কা-লূলান নু’ছিরাকা ‘আলা-মা-জাআনা-মিনাল বাইয়িনা-তি ওয়াল্লাযী ফাতারানাফাকদিমাআনতা কা-দিন ইন্নামা-তাকদী হা-যিহিল হায়া-তাদ দুনইয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাদুকরগণ বলল, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সেই সত্তার কসম! আমাদের কাছে যে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী এসেছে তার উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দিতে পারব না। সুতরাং তুমি যা করতে চাও কর। তুমি যাই কর না কেন তা এই পার্থিব জীবনেই হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাদুকররা বললঃ আমাদের কাছে যে, সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উপর আমরা কিছুতেই তোমাকে প্রাধান্য দেব না। অতএব, তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো শুধু এই পার্থিব জীবনেই যা করার করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তারা বলল, ‘আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার ওপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ওপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দিব না। সুতরাং তুমি কর যা তুমি করতে চাও। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের ওপর কর্তৃত্ব করতে পার।’
৭৩
إِنَّا آمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَا أَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِ ۗ وَاللَّهُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
ইন্নাআ-মান্না-বিরাব্বিনা-লিইয়াগফিরালানা-খাতা-ইয়া-না-ওয়ামাআকরাহতানা‘আলাইহি মিনাছছিহরি ওয়াল্লা-হু খাইরুওঁ ওয়া আবকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমরা তো আমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি, যাতে তিনি ক্ষমা করে দেন আমাদের গুনাহসমূহ এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ তাও। ৩০ আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং চিরস্থায়ী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমরা আমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যাতে তিনি আমাদের পাপ এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ, তা মার্জনা করেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমরা নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি যাতে তিনি ক্ষমা করেন আমাদের অপরাধ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করতে বাধ্য করেছ তা। আর আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।’
তাফসীরঃ
৩০. অনুমান করে দেখুন ঈমান যখন মানুষের অন্তরে বসে যায় তখন তা মানুষের চিন্তা-চেতনায় কত বড় বিপ্লব সাধিত করে। এরাই তো সেই যাদুকর, যাদের সর্বোচ্চ কামনা ছিল ফির‘আউন তাদেরকে পুরস্কৃত করবে এবং নিজ সন্তুষ্টি ও নৈকট্য দান দ্বারা তাদেরকে ধন্য করবে। মুকাবেলায় নামার আগে তো ফির‘আউনের কাছে তারা এরই প্রার্থনা জানিয়েছিল। বলেছিল, আমরা যদি বিজয়ী হই, তবে আমাদেরকে কী পুরস্কার দেওয়া হবে? (দেখুন সূরা আরাফ ৭ : ১১৩)। কিন্তু যখন তাদের সামনে সত্য উদঘাটিত হল এবং অন্তরে তার প্রতি ঈমান ও ইয়াকীন বসে গেল, তখন আর না থাকল ফির‘আউনের অসন্তুষ্টির ভয়, না হাত-পা কাটা যাওয়া ও শূলবিদ্ধ হওয়ার পরওয়া আল্লাহ আকবার!
৭৪
إِنَّهُ مَن يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَىٰ
ইন্নাহূমাইঁ ইয়া’তি রাব্বাহূমুজরিমান ফাইন্না লাহূজাহান্নামা লা-ইয়ামূতুফীহা-ওয়ালাইয়াহইয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের কাছে অপরাধী হয়ে আসবে, তার জন্য আছে জাহান্নাম, যার ভেতর সে মরবেও না, বাঁচবেও না। ৩১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নিশ্চয়ই যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবে না এবং বাঁচবেও না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যে তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে তার জন্যে তো আছে জাহান্নাম, সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না।
তাফসীরঃ
৩১. মৃত্যু হবে না এ কারণে যে, সেখানে কোন মৃত্যু নেই আর ‘বাঁচবে না’ বলা হয়েছে এ কারণে যে, জাহান্নামে তাদের যে জীবন কাটবে তা মরণ অপেক্ষাও নিকৃষ্টতর হবে। তাই তা বেঁচে থাকার মধ্যে গণ্য হওয়ারই উপযুক্ত নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করুন।
৭৫
وَمَن يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَـٰئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَىٰ
ওয়ামাইঁ ইয়া’তিহী মু’মিনান কাদ ‘আমিলাসসা-লিহা-তি ফাউলাইকা লাহুমুদ দারাজা-তুল ‘উলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে ব্যক্তি তার নিকট মুমিন হয়ে আসবে এবং সে সৎকর্মও করে থাকবে, এরূপ লোকদের জন্যই রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আর যারা তাঁর কাছে আসে এমন ঈমানদার হয়ে যায় সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে সুউচ্চ মর্তবা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে মু’মিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে আছে সমুচ্চ মর্যাদা-
৭৬
جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ جَزَاءُ مَن تَزَكَّىٰ
জান্না-তু‘আদনিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু খা-লিদীনা ফীহা- ওয়া যা-লিকা জাঝাউ মান তাঝাক্কা-
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
স্থায়ী উদ্যানরাজি, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে। তারা তাতে সর্বদা থাকবে। এটা যে পবিত্রতা অবলম্বন করেছে তার পুরস্কার।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বসবাসের এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা পবিত্র হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই, যারা পবিত্র।
৭৭
وَلَقَدْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيقًا فِي الْبَحْرِ يَبَسًا لَّا تَخَافُ دَرَكًا وَلَا تَخْشَىٰ
ওয়া লাকাদ আওহাইনাইলা মূছা আন আছরি বি‘ইবা-দী ফাদরিব লাহুম তারীকান ফিল বাহরি ইয়াবাছাল লা-তাখা-ফুদারাকাওঁ ওয়ালা-তাখশা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি মূসার প্রতি ওহী নাযিল করেছিলাম, তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতের বেলা রওয়ানা হয়ে যাও। ৩২ তারপর তাদের জন্য সাগরের ভেতর এমনভাবে শুকনো পথ তৈরি কর, যাতে পেছন থেকে (শত্রু এসে) তোমাকে ধরে ফেলার আশঙ্কা না থাকে এবং অন্য কোন ভয়ও না থাকে। ৩৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি মূসা প্রতি এই মর্মে ওহী করলাম যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাত্রিযোগে বের হয়ে যাও এবং তাদের জন্যে সমুদ্রে শুষ্কপথ নির্মাণ কর। পেছন থেকে এসে তোমাদের ধরে ফেলার আশঙ্কা করো না এবং পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয় করো না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম এই মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রজনীযোগে বহির্গত হও এবং তাদের জন্যে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথ নির্মাণ কর। পশ্চাৎ হতে এসে তোমাকে ধরে ফেলা হবে-এই আশংকা কর না এবং ভয়ও কর না।
তাফসীরঃ
৩২. অর্থাৎ, পথে তোমার সামনে সাগর পড়বে। তখন তুমি যদি সাগরে নিজ লাঠি দ্বারা আঘাত কর, তবে তোমার সম্প্রদায়ের চলার জন্য শুষ্ক পথ তৈরি হয়ে যাবে। সূরা ইউনুসেও (১০ : ৮৯-৯২) এটা বিস্তারিত গত হয়েছে। সামনে সূরা শুআরায়ও (২৬ : ৬০-৬৬) আসবে। যেহেতু এ পথ আল্লাহ তাআলা কেবল তোমার জন্যই সৃষ্টি করবেন, তাই ফির‘আউনের বাহিনী তা দিয়ে চলে তোমাকে ধরতে পারবে না। কাজেই তোমাদের ধরা পড়ার বা ডুবে যাওয়ার কোন ভয় থাকবে না।
৩৩. যাদুকরদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার পরও হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বহুকাল মিসরে কাটিয়েছেন। এ সময় ফির‘আউনের সামনে তিনি তাওহীদ ও সত্য দীনের তাবলীগ অব্যাহত রাখেন। তাঁর নবুওয়াত ও দাওয়াত যে সত্য তার প্রমাণস্বরূপ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একের পর এক বহু নিদর্শন প্রদর্শিত হতে থাকে। সূরা আরাফে তা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনক্রমেই যখন ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায় সত্যের ডাকে সাড়া দিল না; বরং সত্যের বিরুদ্ধে দমননীতি অব্যাহত রাখল, তখন আল্লাহ তাআলা শেষ পর্যন্ত হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিলেন, যেন বনী ইসরাঈলকে নিয়ে রাতারাতি মিসর ত্যাগ করেন।
৭৮
فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ بِجُنُودِهِ فَغَشِيَهُم مِّنَ الْيَمِّ مَا غَشِيَهُمْ
ফাআতবা‘আহুম ফির‘আওনুবিজুনূদিহী ফাগাশিয়াহুম মিনাল ইয়াম্মি মা-গাশিইয়াহুম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর ফির‘আউন নিজ সেনাবাহিনীসহ তার পশ্চাদ্ধাবন করলে সাগরের যে (ভয়াল) জিনিস তাকে আচ্ছন্ন করার তা তাকে আচ্ছন্ন করল। ৩৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর ফেরাউন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল এবং সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জত করল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর ফির‘আওন তার সৈন্যবাহিনীসহ তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল, এরপর সমুদ্র এদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করল।
তাফসীরঃ
৩৪. ‘যে জিনিস তাকে আচ্ছন্ন করার তা তাকে আচ্ছন্ন করল’, এভাবে আচ্ছন্নকারী বস্তুকে অব্যাখ্যাত রেখে ইশারা করা উদ্দেশ্য যে, সে জিনিস বর্ণনাতীত বিভীষিকাময়। অর্থাৎ, ফির‘আউন ও তার বাহিনী যেভাবে সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিল সে দৃশ্য ছিল অতি ভয়াবহ।
৭৯
وَأَضَلَّ فِرْعَوْنُ قَوْمَهُ وَمَا هَدَىٰ
ওয়া আদাল্লা ফির‘আওনুকাওমাহূওয়ামা-হাদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত ফির‘আউন তার জাতিকে বিপথগামী করেছিল। সে তাদেরকে সঠিক পথ দেখায়নি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ফেরআউন তার সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছিল এবং সৎপথ দেখায়নি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর ফির‘আওন তার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সৎপথ দেখায় নাই।
৮০
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ قَدْ أَنجَيْنَاكُم مِّنْ عَدُوِّكُمْ وَوَاعَدْنَاكُمْ جَانِبَ الطُّورِ الْأَيْمَنَ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ
ইয়া-বানীইছরাঈলা কাদ আনজাইনা-কুমমিন‘আদুওবিকুমওয়াওয়া-‘আদনা-কুমজানিবাততূরিল আইমানা ওয়া নাঝঝালনা-‘আলাইকুমুল মান্না ওয়াছছালওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে তোমাদের শত্রু থেকে মুক্তি দিয়েছিলাম এবং তোমাদেরকে তূর পাহাড়ের ডান পাশে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আর তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম মান্ন ও সালওয়া।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে বনী-ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে তোমাদের শক্রুর কবল থেকে উদ্ধার করেছি, তুর পাহাড়ের দক্ষিণ পার্শ্বে তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দান করেছি এবং তোমাদের কাছে ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ নাযিল করেছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে বনী ইসরাঈল! আমি তো তোমাদেরকে শত্রু হতে উদ্ধার করেছিলাম, আমি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং তোমাদের নিকট মান্না ও সাল্ওয়া প্রেরণ করেছিলাম,
৮১
كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيهِ فَيَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبِي ۖ وَمَن يَحْلِلْ عَلَيْهِ غَضَبِي فَقَدْ هَوَىٰ
কুলূমিন তাইয়িবা-তি মা-রাঝাকনা-কুম ওয়ালা-তাতগাও ফীহি ফাইয়াহিল্লা ‘আলাইকুম গাদবী ওয়া মাইঁ ইয়াহলিল ‘আলাইহি গাদাবী ফাকাদ হাওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে পবিত্র রিযক আমি তোমাদেরকে দিয়েছি তা হতে খাও। তাতে সীমালংঘন করো না। তা করলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ বর্ষিত হবে। আর আমার ক্রোধ যার উপর বর্ষিত হয় সে অনিবার্যভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলেছিঃ আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না, তা হলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসে সে ধবংস হয়ে যায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমাদেরকে যা দান করেছি তা হতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এই বিষয়ে সীমালংঘন কর না, করলে তোমাদের ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত এবং যার ওপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়।
৮২
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ
ওয়া ইন্নী লাগাফফা-রুল লিমান তা-বা ওয়া আ-মানা ওয়া ‘আমিলা সা-লিহান ছুম্মাহতাদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর এটাও সত্য যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনে, সৎকর্ম করে অতঃপর সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে আমি তার পক্ষে পরম ক্ষমাশীল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে।
৮৩
۞ وَمَا أَعْجَلَكَ عَن قَوْمِكَ يَا مُوسَىٰ
ওয়ামাআ‘জালাকা ‘আন কাওমিকা ইয়া-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং (মূসা যখন সঙ্গের লোকজনের আগেই তূর পাহাড়ে চলে আসলেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বললেন,) হে মূসা! তুমি তাড়াহুড়া করে তোমার সম্প্রদায়ের আগে আগে কেন আসলে? ৩৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে মূসা, তোমার সম্প্রদায়কে পেছনে ফেলে তুমি ত্বরা করলে কেন?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে মূসা! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলিয়া তোমাকে ত্বরা করতে বাধ্য করল কিসে?
তাফসীরঃ
৩৫. সিনাই মরুভূমিতে অবস্থানকালে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে তূর পাহাড়ে ডেকেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, তিনি সেখানে চল্লিশ দিন ইতিকাফ করবেন, তারপর তাঁকে তাওরাত কিতাব দেওয়া হবে। শুরুতে সিদ্ধান্ত ছিল বনী ইসরাঈলের জনা কয়েক বাছাইকৃত লোকও তাঁর সাথে যাবে। কিন্তু হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তাদের আগেই তাড়াতাড়ি রওয়ানা হয়ে গেলেন। তাঁর ধারণা ছিল বাকি সাথীরাও তাঁর পেছনে পেছনে এসে থাকবে। কিন্তু তারা আসল না।
৮৪
قَالَ هُمْ أُولَاءِ عَلَىٰ أَثَرِي وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ
কা-লা হুম উলাই ‘আলাআছারী ওয়া ‘আজিলতুইলাইকা রাব্বি লিতারদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে বলল, ওই তো তারা আমার পিছনেই আসল বলে। হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার কাছে তাড়াতাড়ি এসেছি এজন্য, যাতে আপনি খুশী হন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি বললেনঃ এই তো তারা আমার পেছনে আসছে এবং হে আমার পালনকর্তা, আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে এলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে বলল, ‘এই তো এরা আমার পশ্চাতে এবং হে আমার প্রতিপালক! আমি ত্বরায় তোমার নিকট এলোাম, তুমি সন্তুষ্ট হবে এজন্যে।’
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads2)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)
৮৫
قَالَ فَإِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِن بَعْدِكَ وَأَضَلَّهُمُ السَّامِرِيُّ
কা-লা ফাইন্না-কাদ ফাতান্না-কাওমাকা মিম বা‘দিকা ওয়া আদাল্লাহুমুছ ছামিরিইয়ু।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বললেন, তোমার চলে আসার পর আমি তোমার সম্প্রদায়কে ফিতনায় ফেলেছি আর সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলেছে। ৩৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বললেনঃ আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি তোমার পর এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি বললেন, ‘আমি তো তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর এবং সামিরী এদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে।’
তাফসীরঃ
৩৬. সামেরী ছিল এক যাদুকর। সে মুখে মুখে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমান এনেছিল, যে কারণে সে তাঁর সঙ্গ নিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল মুনাফেক।
৮৬
فَرَجَعَ مُوسَىٰ إِلَىٰ قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًا ۚ أَفَطَالَ عَلَيْكُمُ الْعَهْدُ أَمْ أَرَدتُّمْ أَن يَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَخْلَفْتُم مَّوْعِدِي
ফারাজা‘আ মূছাইলা-কাওমিহী গাদবা-না আছিফান কা-লা ইয়া-কাওমি আলাম ইয়া‘ইদকুম রাব্বুকুম ওয়া‘দান হাছানান আফাতা-লা ‘আলাইকুমুল ‘আহদুআম আরাততুম আইঁ ইয়াহিল্লা ‘আলাইকুম গাদাবুম মির রাব্বিকুম ফাআখলাফতুম মাও‘ইদী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং মূসা ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসল। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে একটি উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? ৩৭ তারপর কি তোমাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে? ৩৮ না কি তোমরা চাচ্ছিলে তোমাদের উপর তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ বর্ষিত হোক আর সে কারণে তোমরা আমার সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছ?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেলেন ক্রদ্ধ ও অনুতপ্ত অবস্থায়। তিনি বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের পালনকর্তা কি তোমাদেরকে একটি উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তবে কি প্রতিশ্রুতির সময়কাল তোমাদের কাছে দীর্ঘ হয়েছে, না তোমরা চেয়েছ যে, তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার ক্রোধ নেমে আসুক, যে কারণে তোমরা আমার সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করলে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর মূসা তার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেল ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে। সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেন নাই ? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হয়েছে, না তোমরা চাহিয়াছ তোমাদের প্রতি আপতিত হোক তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে ?’
তাফসীরঃ
৩৭. অর্থাৎ, আমার তূর পাহাড়ে গমনের পর তো এতটা লম্বা সময় গত হয়নি যে, তোমাদের ধৈর্য হারাতে হবে এবং আমার জন্য অপেক্ষা না করে এই বাছুরকে মাবুদ বানিয়ে নিতে হবে।
৩৮. ‘উত্তম প্রতিশ্রুতি’ দ্বারা তূর পাহাড়ে তাওরাত দেওয়ার ওয়াদা বোঝানো হয়েছে।
৮৭
قَالُوا مَا أَخْلَفْنَا مَوْعِدَكَ بِمَلْكِنَا وَلَـٰكِنَّا حُمِّلْنَا أَوْزَارًا مِّن زِينَةِ الْقَوْمِ فَقَذَفْنَاهَا فَكَذَٰلِكَ أَلْقَى السَّامِرِيُّ
কা-লূমাআখলাফনা-মাও‘ইদাকা বিমালকিনা-ওয়ালা-কিন্না-হুম্মিলনাআও ঝা-রাম মিন ঝীনাতিল কাওমি ফাকাযাফনা-হা ফাকাযা-লিকা আলকাছছা-মিরিইয়ু।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলল, আমরা আপনার সাথে স্বেচ্ছায় ওয়াদা ভঙ্গ করিনি। বরং ব্যাপার এই যে, আমাদের উপর মানুষের অলংকারের বোঝা চাপানো ছিল। আমরা তা ফেলে দেই। ৩৯ তারপর একইভাবে সামেরীও (কিছু) ফেলে। ৪০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ আমরা তোমার সাথে কৃত ওয়াদা স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি; কিন্তু আমাদের উপর ফেরউনীদের অলংকারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আমরা তা নিক্ষেপ করে দিয়েছি। এমনি ভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলল, ‘আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করি নাই ; তবে আমাদের ওপর চাপাইয়া দেওয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে।
তাফসীরঃ
৩৯. অন্যরা যখন তাদের অলংকার নিক্ষেপ করল, তখন সামেরী তার মুঠোর ভেতর করে কিছু একটা নিয়ে আসল এবং হযরত হারূন আলাইহিস সালামকে বলল, আমিও কি নিক্ষেপ করব? হযরত হারূন আলাইহিস সালাম মনে করলেন, তাও কোন অলংকারই হবে। তাই বললেন, নিক্ষেপ কর। তখন সে বলল, আপনি আমার জন্য দু‘আ করুন নিক্ষেপ কালে আমি যা ইচ্ছা করি তা যেন পূরণ হয়। হযরত হারূন আলাইহিস সালাম তার মুনাফেকী সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তাঁর ধারণায় সে অন্যদের মতই খাঁটি মুমিন ছিল। কাজেই তিনি দু‘আ করলেন। প্রকৃতপক্ষে তার মুঠোর ভেতর কোন অলংকার ছিল না। সে এক মুঠো মাটি নিয়ে এসেছিল। হযরত হারূন আলাইহিস সালামের অনুমতি পেয়ে সে সেই মাটি অলংকারের স্তূপে ফেলে দিল। তাতে সেগুলো গলে গেল। তারপর সে তার দ্বারা একটা বাছুর আকৃতির মূর্তি তৈরি করল, যা থেকে বাছুরের মত হাম্বা ধ্বনি বের হচ্ছিল।
৪০. এখানে যে অলঙ্কারের কথা বলা হয়েছে সে সম্পর্কে দু’টি মত পাওয়া যায়। (এক) কোন কোন মুফাসসিরের ধারণা এসব অলংকার ছিল গনীমতের। এগুলো ফির‘আউনের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাহিনী থেকে বনী ইসরাঈলের হস্তগত হয়েছিল। সে কালে গনীমত ভোগ করা জায়েয ছিল না। বরং তখনকার বিধান অনুযায়ী তা খোলা মাঠে রেখে দেওয়া হত। তারপর আসমান থেকে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিত। তারা যে অলংকারগুলো নিক্ষেপ করেছিল, তা দ্বারা উদ্দেশ্য সম্ভবত এটাই ছিল যে, আসমান থেকে আগুন নেমে তা জ্বালিয়ে দেবে। (দুই) সাধারণভাবে তাফসীর গ্রন্থসমূহে এ সম্পর্কে যে রেওয়ায়াত পাওয়া যায়, তাতে বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈল মিসর ত্যাগ করার আগে ফির‘আউনের সম্প্রদায় তথা কিবতীদের থেকে এসব অলংকার ধার নিয়েছিল। তারা যখন মিসর ছেড়ে রওয়ানা হয়, তখন অলংকারগুলো তাদের সাথেই ছিল। এগুলো যেহেতু অন্যদের আমানত ছিল, তাই মালিকদের বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বনী ইসরাঈলের পক্ষে জায়েয ছিল না। অন্য দিকে তা ফেরত দেওয়ারও কোন উপায় ছিল না। অগত্যা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম তাদেরকে বললেন, এগুলো এখানে ফেলে দাও এবং শত্রুদের থেকে অর্জিত গনীমতের ক্ষেত্রে যে নীতি অবলম্বন কর, এগুলোর ক্ষেত্রেও তাই কর। কিন্তু এসব বর্ণনার মধ্যে কোনওটাই তেমন নির্ভরযোগ্য নয়। সুতরাং এসব অলংকার সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না। এমনও হতে পারে যে, সামেরী তার ভোজবাজি দেখানোর জন্য মানুষকে বলেছিল, তোমরা নিজ-নিজ অলংকার নিচে রাখ। আমি তোমাদেরকে একটা খেলা দেখাই। এস্থলে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে, বনী ইসরাঈল যে তাদের অলংকার নিক্ষেপ করেছিল তা ব্যক্ত করার জন্য আল্লাহ তাআলা قَذَفٌ শব্দ ব্যবহার করেছেন আর সামেরীর নিক্ষেপকে বোঝানোর জন্য اِلْقَاءٌ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এই প্রভেদের দু’টো ব্যাখ্যা হতে পারে। (ক) এটা করা হয়েছে কেবল বর্ণনায় বৈচিত্র্য আনয়নের জন্য। (খ) অথবা সামেরীর নিক্ষেপ দ্বারা অলংকার নিক্ষেপ নয়; বরং তার ভোজবাজির কলা-কৌশল প্রয়োগকে বোঝানো হয়েছে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে এ কারণে যে, اِلْقَاءٌ শব্দটি যাদুকরদের তেলেসমাতির জন্যও ব্যবহৃত হয়।
৮৮
فَأَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهُ خُوَارٌ فَقَالُوا هَـٰذَا إِلَـٰهُكُمْ وَإِلَـٰهُ مُوسَىٰ فَنَسِيَ
ফাআখরাজা লাহুম ‘ইজলান জাছাদাল্লাহূখুওয়া-রুন ফাকা-লূহা-যাইলা-হুকুম ওয়াইলা-হু মূছা-ফানাছী-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর সে তাদের জন্য বের করল একটি বাছুর একটি দেহকাঠামো যার ছিল হাম্বা ধ্বনি। তারা বলল, এই তো তোমাদের মাবুদ এবং মূসারও মাবুদ, কিন্তু মূসা ভুলে গিয়েছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর সে তাদের জন্য তৈরী করে বের করল একটি গো-বৎস, একটা দেহ, যার মধ্যে গরুর শব্দ ছিল। তারা বললঃ এটা তোমাদের উপাস্য এবং মূসার ও উপাস্য, অতঃপর মূসা ভুলে গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এরপর সে এদের জন্যে গড়ল এক গো-বৎস, এক অবয়ব, যা হাম্বা রব করত।’ এরা বলল, ‘এটা তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ্, কিন্তু মূসা ভুলে গেছে।’
৮৯
أَفَلَا يَرَوْنَ أَلَّا يَرْجِعُ إِلَيْهِمْ قَوْلًا وَلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا
আফালা-ইয়ারাওনা আল্লা-ইয়ারজি‘ঊ ইলাইহিম কাওলাওঁ ওয়ালা-ইয়ামলিকুলাহুম দাররাওঁ ওয়ালা-নাফ‘আ-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কি তাদের নজরে আসেনি যে, তা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন অপকার বা উপকার করারও ক্ষমতা রাখে না?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের কোন কথার উত্তর দেয় না এবং তারে কোন ক্ষতি ও উপকার করার ক্ষমতাও রাখে না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তবে কি এরা ভেবে দেখে না যে, তা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না ?
৯০
وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هَارُونُ مِن قَبْلُ يَا قَوْمِ إِنَّمَا فُتِنتُم بِهِ ۖ وَإِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمَـٰنُ فَاتَّبِعُونِي وَأَطِيعُوا أَمْرِي
ওয়ালাকাদ কা-লা লাহুম হা-রূনুমিন কাবলুইয়া-কাওমি ইন্নামা-ফুতিনতুম বিহী ওয়া ইন্না রাব্বাকুমুর রাহমা-নুফাত্তাবি‘ঊনী ওয়া আতী‘ঊআমরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হারূন তাদেরকে আগেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদেরকে এর (অর্থাৎ এই বাছুরটির) দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের রব্ব তো রহমান। সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল। ৪১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হারুন তাদেরকে পুর্বেই বলেছিলেনঃ হে আমার কওম, তোমরা তো এই গো-বৎস দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছ এবং তোমাদের পালনকর্তা দয়াময়। অতএব, তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হারূন এদেরকে পূর্বেই বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! এটা দিয়ে তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। তোমাদের প্রতিপালক তো দয়াময়; সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল।’
তাফসীরঃ
৪১. বাইবেলের একটি বর্ণনা আছে, হযরত হারূন আলাইহিস সালাম নিজেও বাছুর পূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহ, দেখুন যাত্রা পুস্তক, ৩২:১-৬)। কুরআন মাজীদের এ আয়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে বর্ণনাটি সহীহ নয়। তাছাড়া বর্ণনাটি যে সত্যের অপলাপ তা এমনিতেই বোঝা যায়। কেননা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম একজন নবী ছিলেন, কোন নবী শিরকে লিপ্ত হবেন এটা কল্পনাও করা যায় না।
৯১
قَالُوا لَن نَّبْرَحَ عَلَيْهِ عَاكِفِينَ حَتَّىٰ يَرْجِعَ إِلَيْنَا مُوسَىٰ
কা-লূলান নাবরাহা ‘আলাইহি ‘আ-কিফীনা হাত্তা-ইয়ারজি‘আ ইলাইনা-মূছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলল, যতক্ষণ পর্যন্ত মূসা ফিরে না আসে, আমরা এর পূজায় রত থাকব।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ মূসা আমাদের কাছে ফিরে আসা পর্যন্ত আমরা সদাসর্বদা এর সাথেই সংযুক্ত হয়ে বসে থাকব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলেছিল, ‘আমাদের নিকট মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এটার পূজা হতে কিছুতেই বিরত হব না।’
৯২
قَالَ يَا هَارُونُ مَا مَنَعَكَ إِذْ رَأَيْتَهُمْ ضَلُّوا
কা-লা ইয়া-হা-রূনূমা-মানা‘আকা ইযরাআইতাহুম দাল্লু।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা (ফিরে এসে) বলল, হে হারূন! তুমি যখন দেখলে তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন কোন জিনিস তোমাকে নিবৃত্ত রেখেছিল
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললেনঃ হে হারুন, তুমি যখন তাদেরকে পথ ভ্রষ্ট হতে দেখলে, তখন তোমাকে কিসে নিবৃত্ত করল ?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘হে হারূন! তুমি যখন দেখলে এরা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল-
৯৩
أَلَّا تَتَّبِعَنِ ۖ أَفَعَصَيْتَ أَمْرِي
আল্লা-তাত্তাবি‘আনি আফা‘আসাইতা আমরী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে, তুমি আমার অনুসরণ করলে না? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করলে? ৪২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে? তবে তুমি কি আমার আদেশ অমান্য করেছ?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমার অনুসরণ করা হতে ? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করলে ?’
তাফসীরঃ
৪২. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তূর পাহাড়ে যাওয়ার সময় হযরত হারূন আলাইহিস সালামকে নিজ স্থলাভিষিক্ত করে গিয়েছিলেন, তখন তাকে বলেছিলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদেরকে সংশোধন করবে এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না’ (আরাফ ৭ : ১৪২)। এখানে তাঁর সেই নির্দেশের প্রতিই ইশারা করা হয়েছে। তাঁর কথার সারমর্ম এই যে, এরা যখন বিপথে চলছিল, তখন আপনার কর্তব্য ছিল অতি দ্রুত আমার কাছে চলে আসা। সেটা করলে এক তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সংশ্রব ত্যাগ করা হত, দ্বিতীয়ত আমার মাধ্যমে তাদেরকে শোধরানোরও চেষ্টা করা যেত।
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads1)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)
৯৪
قَالَ يَا ابْنَ أُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي ۖ إِنِّي خَشِيتُ أَن تَقُولَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِي
কালা ইয়াবনাউম্মা লা-তা’খুযবিলিহইয়াতী ওয়ালা-বিরা’ছী ইন্নী খাশীতুআন তাকূলা ফাররাকতা বাইনা বানীইছরাঈলা ওয়ালাম তারকুব কাওলী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হারূন বলল, ওহে আমার মায়ের পুত্র! আমার দাড়ি ধরো না এবং আমার মাথাও নয়। আসলে আমি আশঙ্কা করছিলাম তুমি বলবে, ‘তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা আমলে নাওনি। ৪৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি বললেনঃ হে আমার জননী-তনয়, আমার শ্মশ্রু ও মাথার চুল ধরে আকর্ষণ করো না; আমি আশঙ্কা করলাম যে, তুমি বলবেঃ তুমি বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা স্মরণে রাখনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হারূন বলল, ‘হে আমার সহোদর! আমার শ্মশ্রু ও কেশ ধরিও না। আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, ‘তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ ও তুমি আমার বাক্য পালনে যত্নবান হও নাই।’
তাফসীরঃ
৪৩. হযরত হারূন আলাইহিস সালামের এ বক্তব্যের অর্থ হল, আমি চলে গেলে এরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ত। কিছু লোক তো আমার অনুগামী হত। বাকিরা বিপথগামীদের সঙ্গে থাকত, যারা আমাকে হত্যা পর্যন্ত করার পাঁয়তারা করছিল (যেমন সূরা আরাফে ৭ : ১৫০ হযরত হারূন আলাইহিস সালামের জবানী বর্ণিত হয়েছে)। সুতরাং আপনি যে বলেছিলেন, ‘তাদেরকে সংশোধন করবে’, আমার ভয় হয়েছিল সেটা করলে আপনার এই নির্দেশ অমান্য করা হত।
৯৫
قَالَ فَمَا خَطْبُكَ يَا سَامِرِيُّ
কা-লা ফামা-খাতবুকা ইয়া-ছা-মিরিইয়ু।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, তা হে সামেরী! তোমার ব্যাপার কী?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললেন হে সামেরী, এখন তোমার ব্যাপার কি?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘হে সামিরী! তোমার ব্যাপার কী ?’
৯৬
قَالَ بَصُرْتُ بِمَا لَمْ يَبْصُرُوا بِهِ فَقَبَضْتُ قَبْضَةً مِّنْ أَثَرِ الرَّسُولِ فَنَبَذْتُهَا وَكَذَٰلِكَ سَوَّلَتْ لِي نَفْسِي
কা-লা বাসুরতুবিমা-লাম ইয়াবসুরূবিহী ফাকাবাদতুকাবদাতাম মিন আছারির রাছূলি ফানাবাযতুহা-ওয়াকাযা-লিকা ছাওওয়ালাত লী নাফছী।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে বলল, আমি এমন একটা জিনিস দেখেছিলাম, যা অন্যদের নজরে পড়েনি। তাই আমি রাসূলের পদচিহ্ন থেকে একমুঠো তুলে নিয়েছিলাম। সেটাই আমি (বাছুরের মুখে) ফেলে দেই। ৪৪ আমার মন আমাকে এমনই কিছু বুঝিয়েছিল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে বললঃ আমি দেখলাম যা অন্যেরা দেখেনি। অতঃপর আমি সেই প্রেরিত ব্যক্তির পদচিহ্নের নীচ থেকে এক মুঠি মাটি নিয়ে নিলাম। অতঃপর আমি তা নিক্ষেপ করলাম। আমাকে আমার মন এই মন্ত্রণাই দিল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে বলল, ‘আমি দেখেছিলাম যা এরা দেখে নাই, এরপর আমি সেই দূতের পদচিহ্ন হতে একমুষ্টি নিয়েছিলাম এবং আমি তা নিক্ষেপ করেছিলাম; আমার মন আমার জন্যে শোভন করেছিল এইরূপ করা।’
তাফসীরঃ
৪৪. ‘রাসূলের পদচিহ্ন’ বলে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন বোঝানো হয়েছে। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাফেলায় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামও ছিলেন। মুফাসসিরগণ সাধারণভাবে এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মানব বেশে একটি ঘোড়ায় সওয়ার ছিলেন। সামেরী লক্ষ্য করেছিল, তাঁর ঘোড়ার পা যেখানেই পড়ে সেখানে জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। সামেরী উপলব্ধি করল ঘোড়ার পা ফেলার স্থানে সঞ্জিবনী শক্তি আছে এবং এ শক্তিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। অর্থাৎ, নিষ্প্রাণ কোন বস্তুতে এ মাটি প্রয়োগ করলে তাতে জৈব বৈশিষ্ট্য সঞ্চার হতে পারে। সুতরাং সে একমুঠো মাটি নিয়ে বাছুরের মূর্তিতে ঢুকিয়ে দিল। ফলে তার থেকে হাম্বা-রব বের হতে লাগল। কিন্তু কোন কোন মুফাসসির, যেমন হযরত মাওলানা হক্কানী (রহ.) তাঁর ‘তাফসীরে হক্কানী’-তে (৩ খণ্ড, ২৭২-২৭৩) বলেন, সামেরীর এ বিবৃতি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসলে বাছুরের থেকে আওয়াজ বের হচ্ছিল বাতাস চলাচলের কারণে। কুরআন মাজীদ নিজে যেহেতু এ সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেনি এবং সহীহ হাদীসেও এ সম্পর্কে কিছু পাওয়া যায় না আবার এটা জানার উপর দীনী জরুরী কোন বিষয়ও নির্ভরশীল নয়, তাই বাছুরটির রহস্য সন্ধানের পেছনে না পড়ে বিষয়টাকে আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত করাই শ্রেয় যে, তিনি ভালো জানেন সেটির কী রহস্য।
৯৭
قَالَ فَاذْهَبْ فَإِنَّ لَكَ فِي الْحَيَاةِ أَن تَقُولَ لَا مِسَاسَ ۖ وَإِنَّ لَكَ مَوْعِدًا لَّن تُخْلَفَهُ ۖ وَانظُرْ إِلَىٰ إِلَـٰهِكَ الَّذِي ظَلْتَ عَلَيْهِ عَاكِفًا ۖ لَّنُحَرِّقَنَّهُ ثُمَّ لَنَنسِفَنَّهُ فِي الْيَمِّ نَسْفًا
কা-লা ফাযহাব ফাইন্না লাকা ফিল হায়া-তি আন তাকূলা লা-মিছা-ছা ওয়া ইন্নালাকা মাও‘ইদাল লান তুখলাফাহূও ওয়ানজুর ইলাইলা-হিকাল্লাযী জালতা ‘আলাইহি আ-কিফাল লানুহাররিকান্নাহূছু ম্মা লানানছিফান্নাহূফিল ইয়াম্মি নাছফা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
মূসা বলল, তুমি চলে যাও। জীবনভর তোমার কাজ হবে মানুষকে এই বলতে থাকা যে, ‘আমাকে ছুঁয়ো না’। ৪৫ (তাছাড়া) তোমার জন্য আছে এক প্রতিশ্রুত কাল, যা তোমার থেকে টলানো যাবে না। ৪৬ তুমি তোমার এই (অলীক) মাবুদকে দেখ, যার পূজায় তুমি জমে বসেছিলে, আমরা একে জ্বালিয়ে দেব। তারপর একে গুঁড়ো করে সাগরে ছিটিয়ে দেব।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মূসা বললেনঃ দূর হ, তোর জন্য সারা জীবন এ শাস্তিই রইল যে, তুই বলবি; আমাকে স্পর্শ করো না, এবং তোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়াদা আছে, যার ব্যতিক্রম হবে না। তুই তোর সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর, যাকে তুই ঘিরে থাকতি। আমরা সেটি জালিয়ে দেবই। অতঃপর একে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে ছড়িয়ে দেবই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলল, ‘দূর হও; তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্যে এটাই রইল যে, তুমি বলবে, ‘আমি অস্পৃশ্য’, এবং তোমার জন্যে রইল এক নির্দিষ্ট কাল, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না এবং তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পূজায় তুমি রত ছিলে; আমরা একে জ্বালাইয়া দিবই, এরপর একে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই।’
তাফসীরঃ
৪৫. ‘প্রতিশ্রুত কাল’ বলতে আখেরাত বোঝানো হয়েছে, যেখানে তাকে এ অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
৪৬. বাছুর পূজার ক্ষেত্রে সামেরী মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। তাই তাকে এই শাস্তি দেওয়া হল যে, সকলে তাকে বয়কট করে চলবে। কেউ তাকে স্পর্শ করবে না এবং সেও কাউকে স্পর্শ করবে না। অর্থাৎ সে সম্পূর্ণ অস্পৃশ্য থাকবে। অস্পৃশ্য হওয়ার এ শাস্তি দুইভাবে হতে পারে। (ক) হয়ত আইনী হুকুম জারি করা হয়েছিল, কেউ যেন তাকে স্পর্শ না করে, (খ) অথবা কোন কোন রেওয়ায়াতে যেমন বলা হয়েছে, তার শরীরে এমন কোন রোগ দেখা দিয়েছিল, যদ্দরুণ কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারত না। স্পর্শ করলে তার নিজের ও স্পর্শকারীর উভয়েরই শরীরে জ্বর আসত।
৯৮
إِنَّمَا إِلَـٰهُكُمُ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
ইন্নামাইলা-হুকুমুল্লা-হুল লাযী লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া ওয়াছি‘আ কুল্লা শাইয়িন ‘ইলমা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
প্রকৃতপক্ষে তোমাদের সকলের মাবুদ তো কেবল এক আল্লাহই, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তাঁর জ্ঞান সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। সব বিষয় তাঁর জ্ঞানের পরিধিভুক্ত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমাদের ইলাহ্ তো কেবল আল্লাহ্ই যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তাঁর জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত।
৯৯
كَذَٰلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاءِ مَا قَدْ سَبَقَ ۚ وَقَدْ آتَيْنَاكَ مِن لَّدُنَّا ذِكْرًا
কাযা-লিকা নাকুসসু‘আলাইকা মিন আমবাই মা কাদ ছাবাকা ওয়া কাদ আতাইনা-কা মিল্লাদুন্না-যিকরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে নবী!) আমি এভাবে অতীতে যা ঘটেছে তার কিছু সংবাদ তোমাকে অবহিত করি আর আমি তোমাকে আমার নিকট থেকে দান করেছি এক উপদেশবাণী। ৪৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এমনিভাবে আমি পূর্বে যা ঘটেছে, তার সংবাদ আপনার কাছে বর্ণনা করি। আমি আমার কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি পড়ার গ্রন্থ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পূর্বে যা ঘটেছে তার সংবাদ আমি এইভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি এবং আমি আমার নিকট হতে তোমাকে দান করেছি উপদেশ,
তাফসীরঃ
৪৭. হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার পর এ আয়াতে বলা হচ্ছে, একজন উম্মী ও নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও এবং জ্ঞানার্জন ও ইতিহাস সম্পর্কে অবগতি লাভের কোন মাধ্যম হাতে না থাকার পরও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখে এসব ঘটনা বিবৃত হওয়া তাঁর রিসালাতের উজ্জ্বল দলীল। এটা প্রমাণ করে তিনি একজন সত্য রাসূল এবং তিনি যে সব আয়াত পাঠ করেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ।
১০০
مَّنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
মান আ‘রাদা ‘আনহু ফাইন্নাহূইয়াহমিলুইয়াওমাল কিয়া-মাতি বিঝরা-
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে কিয়ামতের দিন তারা বহন করবে মস্ত বোঝা।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কেয়ামতের দিন বোঝা বহন করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা হতে যে বিমুখ হবে সে অবশ্যই কিয়ামতের দিন মহাভার বহন করবে।
১০১
خَالِدِينَ فِيهِ ۖ وَسَاءَ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِمْلًا
খা-লিদীনা ফীহি ওয়া ছাআ লাহুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি হিম লা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যার (শাস্তির) ভেতর তারা সর্বদা থাকবে। কিয়ামতের দিন তাদের জন্য এটা হবে নিকৃষ্টতর বোঝা,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা তাতে চিরকাল থাকবে এবং কেয়ামতের দিন এই বোঝা তাদের জন্যে মন্দ হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এতে এরা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন এই বোঝা এদের জন্যে হবে কত মন্দ!
১০২
يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ ۚ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ زُرْقًا
ইয়াওমা ইউনফাখুফিসসূরি ওয়া নাহশুরুল মুজরিমীনা ইয়াওমাইযিন ঝুরকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যেদিন শিঙ্গায় ফুক দেওয়া হবে এবং আমি অপরাধীদের সমবেত করব নীলবর্ণরূপে। ৪৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন সিঙ্গায় ফূৎকার দেয়া হবে, সেদিন আমি অপরাধীদেরকে সমবেত করব নীল চক্ষু অবস্থায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে এবং যেই দিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব।
তাফসীরঃ
৪৮. زرق শব্দটি ازرق-এর বহুবচন। অর্থ নীল বর্ণবিশিষ্ট। শব্দটি অন্ধ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আয়াতে এর অর্থ দুটোই হতে পারে। হয়ত তাদেরকে কদর্যরূপে দেখানোর জন্য চোখ নীল করে দেওয়া হবে। অথবা তাদেরকে অন্ধরূপেই হাশরের ময়দানে হাজির করা হবে। অবশ্য পরে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, যাতে জাহান্নামের আযাব প্রত্যক্ষ করতে পারে। যেমন সূরা কাহফে (আয়াত ৫৩) বলা হয়েছে। তা ছাড়া বহু আয়াত ও হাদীছে আছে তাদের চেহারা হবে কালো। -অনুবাদক
১০৩
يَتَخَافَتُونَ بَيْنَهُمْ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا عَشْرًا
ইয়াতাখা-ফাতূনা বাইনাহুম ইল লাবিছতুম ইল্লা-‘আশরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের নিজেদের মধ্যে চুপিসারে বলাবলি করবে, তোমরা (কবরে বা দুনিয়ায়) দশ দিনের বেশি থাকনি। ৪৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা চুপিসারে পরস্পরে বলাবলি করবেঃ তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেই দিন এরা নিজেদের মধ্যে চুপিচুপি বলাবলি করবে, ‘তোমরা মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে।’
তাফসীরঃ
৪৯. অর্থাৎ, কিয়ামত দিবস তাদের জন্য এমনই বিভীষিকাময় হবে যদ্দরুণ তাদের কাছে দুনিয়ার সমগ্র জীবন অতি সংক্ষিপ্ত মনে হবে। যেন সেটা দিন দশেকের ব্যাপার।
১০৪
نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ إِذْ يَقُولُ أَمْثَلُهُمْ طَرِيقَةً إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا يَوْمًا
নাহনুআ‘লামুবিমা-ইয়াকূ লূনা ইযইয়াকূ লুআমছালুহুম তারীকাতান ইল লাবিছতুম ইল্লা-ইয়াওমা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা যে বিষয়ে বলাবলি করবে তার প্রকৃত অবস্থা আমার ভালোভাবে জানা আছে, ৫০ যখন তাদের মধ্যে যে সর্বাপেক্ষা ভালো পথে ছিল সে বলবে, তোমরা এক দিনের বেশি অবস্থান করনি। ৫১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা কি বলে তা আমি ভালোভাবে জানি। তাদের মধ্যে যে, অপেক্ষাকৃত উত্তম পথের অনুসারী সে বলবেঃ তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি ভাল জানি এরা কি বলবে, এদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল সে বলবে, ‘তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে।’
তাফসীরঃ
৫০. অর্থাৎ, যে ব্যক্তিকে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান মনে করা হত, তার কাছে সে সময়টা আরও বেশি সংক্ষিপ্ত মনে হবে। সে বলবে, তোমাদের অবস্থানের পরিমাণ ছিল মাত্র এক দিন। তার বেশি নয়।
৫১. অর্থাৎ, যে জীবনকে তারা মাত্র দশ দিন গণ্য করছে তার প্রকৃত মেয়াদ কি ছিল তা আমার জানা আছে।
১০৫
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا
ওয়া ইয়াছআলূনাকা ‘আনিল জিবা-লি ফাকুল ইয়ানছিফুহা-রাববী নাছফা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
লোকে তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (যে, কিয়ামতে তার কী অবস্থা হবে?) বলে দাও, আমার প্রতিপালক তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ধুলার মত উড়িয়ে দিবেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা আপনাকে পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করা। অতএব, আপনি বলুনঃ আমার পালনকর্তা পহাড়সমূহকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘আমার প্রতিপালক এদেরকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন।
১০৬
فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا
ফাইয়াযারুহা-কা-‘আন সাফসাফা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর তাকে পরিণত করবেন ৫২ সমতল প্রান্তরে
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর পৃথিবীকে মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এরপর তিনি একে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে,
তাফসীরঃ
৫২. অর্থাৎ পাহাড়ের স্থানটিকে অথবা ভূমিকে এমন সমতল স্থানে পরিণত করবেন, যাতে স্থাপনা ও গাছপালা থাকবে না। -অনুবাদক
১০৭
لَّا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا
লা-তারা-ফীহা-‘ইওয়াজাওঁ ওয়ালাআমতা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাতে তুমি না কোন বক্রতা দেখতে পাবে না কোন উচ্চতা।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তুমি তাতে মোড় ও টিলা দেখবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না।’
১০৮
يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ ۖ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَـٰنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا
ইয়াওমাইযিইঁ ইয়াত্তাবি‘ঊনাদ্দা-‘ইয়া লা-‘ইওয়াজালাহূ ওয়াখাশা‘আতিল আসওয়া-তু লিররাহমা-নি ফালা-তাছমা‘উ ইল্লা-হামছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে দিন সকলে আহ্বানকারীর অনুসরণ করবে এমনভাবে যে, তার কাছে কোন বক্রতা পরিদৃষ্ট হবে না ৫৩ এবং দয়াময় আল্লাহর সামনে সব আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে যাবে। ফলে তুমি পায়ের মৃদু আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পাবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সেই দিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, যার কথা এদিক-সেদিক হবে না এবং দয়াময় আল্লাহর ভয়ে সব শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু গুঞ্জন ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেই দিন এরা আহ্বানকারীর অনুসরণ করবে, এই ব্যাপারে এদিক-ওদিক করতে পারবে না। দয়াময়ের সামনে সকল শব্দ স্তব্ধ হয়ে যাবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না।
তাফসীরঃ
৫৩. অর্থাৎ হাশরের ময়দানে সমবেত হওয়ার জন্য যখন ফিরিশতা ডাক দেবে, তখন সকল মানুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করে সোজা তার পিছনে পিছনে ছুটবে। ফলে তাদের চলায় তার দৃষ্টিতে কোন বক্রতা পরিলক্ষিত হবে না। আহা! আজ ইহজগতেও যদি মানুষ আল্লাহর পক্ষ হতে আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিয়ে সোজাসুজি তাদের দেখানো পথে চলত! (আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল বক্রতা থেকে হেফাজত করে সরল সোজা পথে পরিচালিত করুন (আমীন)। -অনুবাদক
১০৯
يَوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا
ইয়াওমাইযিল লা-তানফা‘উশশাফা-‘আতুইল্লা-মান আযিনা লাহুর রাহমা-নুওয়া রাদিয়া লাহূকাওলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে দিন কারও সুপারিশ কোন কাজে আসবে না, সেই ব্যক্তি (এর সুপারিশ) ছাড়া, যাকে দয়াময় আল্লাহ অনুমতি দিবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
দয়াময় যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত কারও সুপারিশ সেই দিন কোন কাজে আসবে না।
১১০
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খালফাহুম ওয়ালা-ইউহীতূনা বিহী ‘ইলমা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনি মানুষের অগ্র-পশ্চাৎ সবকিছুই জানেন। কিন্তু তারা তাকে জ্ঞানায়ত্ত করতে পারে না। ৫৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি জানেন যা কিছু তাদের সামনে ও পশ্চাতে আছে এবং তারা তাকে জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ত করতে পারে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাদের সামনে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত, কিন্তু এরা জ্ঞান দিয়ে তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না।
তাফসীরঃ
৫৪. অর্থাৎ মানুষের পক্ষে আল্লাহ তাআলাকে পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়। তাঁর সত্তাকে তো নয়ই, তাঁর গুণাবলীও সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে না, যেমন তাঁর জ্ঞানের বিষয়টা। তিনি তো নিজ সৃষ্টিজগতের বর্তমান ও ভূত-ভবিষ্যত সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ জানেন, কিন্তু তিনি যা কিছু জানেন, মানুষের পক্ষে তা সব জানা সম্ভব নয়। মানুষ জানে তার কিঞ্চিতমাত্র। ‘অথৈ সাগর থেকে এক বিন্দু জল’ এর সাথেও তাকে তুলনা করা যায় না। তবে বান্দা হিসেবে মাবুদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যতটুকু জ্ঞান দরকার, আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে তা মানুষকে সরবরাহ করেছেন। তাঁর সম্পর্কে অতটুকু জানাই মানুষের জন্য যথেষ্ট। -অনুবাদক
১১১
۞ وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا
ওয়া ‘আনাতিল উজূহু লিলহাইয়িল কাইয়ুমি ওয়া কাদ খা-বা মান হামালা জুলমা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল-হায়্যুল কায়্যূমের (অর্থাৎ চিরঞ্জীব, নিয়ন্ত্রক, সেই সত্তার) সামনে সকল চেহারা নত হয়ে থাকবে। আর যে-কেউ জুলুমের ভার বহন করবে, সে-ই ব্যর্থকাম হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সেই চিরঞ্জীব চিরস্থায়ীর সামনে সব মুখমন্ডল অবনমিত হবে এবং সে ব্যর্থ হবে যে জুলুমের বোঝা বহন করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারকের নিকট সকলেই হবে অধোবদন এবং সে-ই ব্যর্থ হবে, যে জুলুমের ভার বহন করবে।
১১২
وَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا
ওয়া মাইঁ ইয়া‘মাল মিনাসসা-লিহা-তি ওয়া হুওয়া মু’মিনুন ফালা-ইয়াখা-ফুজুলমাওঁ ওয়ালাহাদমা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর যে-কেউ সৎকর্ম করবে, সে যদি মুমিন হয়, তবে তার কোন জুলুমের ভয় থাকবে না এবং অধিকার খর্বেরও না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে ঈমানদার অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, সে জুলুম ও ক্ষতির আশঙ্কা করবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যে সৎকর্ম করে মু’মিন হয়ে, তার কোন আশংকা নেই অবিচারের এবং অন্য কোন ক্ষতির।
১১৩
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ الْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا
ওয়া কাযা-লিকা আনঝালনা-হুকুরআ-নান ‘আরাবিইইয়াওঁ ওয়া সাররাফনা ফীহি মিনাল ওয়া‘ঈদি লা‘আল্লাহুম ইয়াত্তাকূনা আও ইউহদিছু লাহুম যিকরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এভাবেই আমি একে এক আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি এবং এতে সতর্কবাণী বর্ণনা করেছি বিভিন্নভাবে, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে অথবা তা তাদের ভেতর কিছুটা সচেতনতা উৎপাদন করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এমনিভাবে আমি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্কবাণী ব্যক্ত করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এইরূপেই আমি কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় এবং এতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী যাতে এরা ভয় করে বা এটা হয় এদের জন্যে উপদেশ।
১১৪
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۗ وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْآنِ مِن قَبْلِ أَن يُقْضَىٰ إِلَيْكَ وَحْيُهُ ۖ وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
ফাতা‘আ-লাল্লা-হুল মালিকুল হাক্কু ওয়ালা-তা‘জাল বিলকুরআ-নি মিন কাবলি আইঁ ইউকদাইলাইকা ওয়াহইউহূ, ওয়াকুর রাব্বি ঝিদনী ‘ইলমা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আল্লাহ সমুচ্চ, যিনি প্রকৃত অধিপতি। (হে নবী!) ওহীর মাধ্যমে যখন কুরআন নাযিল হয়, তখন তা শেষ হওয়ার আগে কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না ৫৫ এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! জ্ঞানে আমাকে আরও উন্নতি দান কর। ৫৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সত্যিকার অধীশ্বর আল্লাহ মহান। আপনার প্রতি আল্লাহর ওহী সম্পুর্ণ হওয়ার পূর্বে আপনি কোরআন গ্রহণের ব্যপারে তাড়াহুড়া করবেন না এবং বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ অতি মহান, প্রকৃত অধিপতি। তোমার প্রতি আল্লাহ্ র ওহী সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কুরআন পাঠে তুমি ত্বরা কর না এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।’
তাফসীরঃ
৫৫. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ দু‘আ শিক্ষা দিয়ে এই মহা সত্য স্পষ্ট করা হয়েছে যে, জ্ঞান এমনই এক মহা সাগর, যার কোন কুল-কিনারা নেই। কাজেই জ্ঞানের কোন স্তরেই পৌঁছে পরিতৃপ্তি বোধ করা উচিত নয় যে, যথেষ্ট হয়েছে। বরং সর্বদাই জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য চেষ্টারত থাকা ও দু‘আ করা উচিত। এ দু‘আ যেমন স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য করা চাই, তেমনি জ্ঞানের সমৃদ্ধি ও সঠিক বুঝের জন্যও।
৫৬. হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যখন ওহীর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কুরআন মাজীদের আয়াত নাযিল করতেন, তখন পাছে ভুলে যান এজন্য তিনি তা সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকতেন। বলাবাহুল্য এতে তাঁর খুব কষ্ট হত। এ আয়াতে তাঁকে বলা হচ্ছে, আপনার এত পরিশ্রমের দরকার নেই। আল্লাহ তাআলা নিজেই আপনার বক্ষদেশে কুরআন মাজীদকে সংরক্ষিত করবেন। সূরা কিয়ামায়ও (৭৫ : ১৬-১৮) এ বিষয়টা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
১১৫
وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَىٰ آدَمَ مِن قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا
ওয়া লাকাদ ‘আহিদনাইলাআ-দামা মিন কাবলুফানাছিয়া ওয়া লাম নাজিদ লাহূ‘আঝমা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি ইতঃপূর্বে আদমকে একটা বিষয়ে আদেশ করেছিলাম, কিন্তু সে তা ভুলে গেল এবং আমি তার মধ্যে পাইনি প্রতিজ্ঞা। ৫৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল; আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাই নাই।
তাফসীরঃ
৫৭. এখানে যে আদেশের কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা বিশেষ এক গাছের ফল না খাওয়ার নির্দেশ বোঝানো হয়েছে। এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এবং এ সম্পর্কিত প্রশ্নসমূহের উত্তর সূরা বাকারায় চলে গেছে (২ : ৩৪-৩৯)। এখানে আদম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যে বলা হয়েছে ‘আমি তার মধ্যে প্রতিজ্ঞা পাইনি’ তার দু’টি ব্যাখ্যা হতে পারে। (এক) কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, গাছের ফল খেয়ে ফেলার যে ভুল তাঁর দ্বারা ঘটেছিল, তাতে তাঁর প্রতিজ্ঞার কোন ভূমিকা ছিল না। অর্থাৎ, তিনি তা খাওয়ার সংকল্প করেছিলেন বা নাফরমানী করার ইচ্ছায় হুকুম অমান্য করেছিলেন এমন নয়; বরং অসতর্কতাবশত তার ভুল হয়ে গিয়েছিল।
১১৬
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ
ওয়া ইযকুলনা-লিলমালাইকাতিছ জু দূলিআ-দামা ফছাজাদূ ইল্লাইবলীছা আবা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা কর। তখন সকলেই সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ তোমরা আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করল। সে অমান্য করল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
স্মরণ কর, যখন ফেরেশতাগণকে বললাম, ‘আদমের প্রতি সিজ্দা কর,’ তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল, সে অমান্য করল।
১১৭
فَقُلْنَا يَا آدَمُ إِنَّ هَـٰذَا عَدُوٌّ لَّكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقَىٰ
ফাকুলনা-ইয়াআ-দামু ইন্না হা-যা- ‘আদুওউল্লাকা ওয়ালি ঝাওজিকা ফালাইউখরিজান্নাকুমা-মিনাল জান্নাতি ফাতাশকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আমি বললাম, হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। কাজেই সে যেন তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়। তাহলে তুমি কষ্টে পড়ে যাবে। ৫৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর আমি বললামঃ হে আদম, এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, সুতরাং সে যেন বের করে না দেয় তোমাদের জান্নাত থেকে। তাহলে তোমরা কষ্টে পতিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর আমি বললাম, ‘হে আদম! নিশ্চয়ই এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা দুঃখ-কষ্ট পাবে।
তাফসীরঃ
৫৮. এ আয়াতকে পরবর্তী আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়লে অর্থ হয়, জান্নাতে তো খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি জীবনের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস বিনা শ্রমেই তোমরা পেয়ে গেছ। কিন্তু জান্নাত থেকে বের হয়ে গেল এসব জিনিস অর্জন করতে প্রচুর কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হবে।
১১৮
إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَىٰ
ইন্না লাকা আল্লা-তাজু‘আ ফীহা-ওয়ালা-তা‘রা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এখানে তোমার এই সুবিধা আছে যে, তুমি ক্ষুধার্ত হবে না এবং বিবস্ত্রও না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাকে এই দেয়া হল যে, তুমি এতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং বস্ত্রহীণ হবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তোমার জন্যে এটাই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবে না ও নগ্নও হবে না;
১১৯
وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَىٰ
ওয়া আন্নাকা লা-তাজমাউ ফীহা-ওয়ালা-তাদহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর না এখানে তৃষ্ণার্ত হবে, না রোদের তাপ ভুগবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তোমার পিপাসাও হবে না এবং রৌদ্রেও কষ্ট পাবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং সেখানে পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্র-ক্লিষ্টও হবে না।’
১২০
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَىٰ شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَىٰ
ফাওয়াছওয়াছা ইলাইহিশ শাইতা-নুকা-লা ইয়াআ-দামুহাল আদুল্লুকা ‘আলা-শাজারাতিল খুলদি ওয়া মুলকিল লা-ইয়াবলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর শয়তান তার অন্তরে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! তোমাকে কি এমন একটা গাছের সন্ধান দেব, যা দ্বারা অনন্ত জীবন ও এমন রাজত্ব লাভ হয়, যা কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না? ৫৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল; সে বলল, ‘হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্ত জীবনপ্রদ বৃক্ষের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা ?’
তাফসীরঃ
৫৯. এর সাথে শয়তান নিষেধাজ্ঞার এই ব্যাখ্যাও তাদের সামনে পেশ করল যে, এ গাছের ফল খেতে বারণ করা হয়েছিল সাময়িক কালের জন্য। অর্থাৎ, এর ফল খেয়ে হজম করার মত শক্তি তোমাদের তখন ছিল না। যেহেতু তোমরা দীর্ঘদিন জান্নাত বাসের ফলে এর পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গেছ, তাই এখন আর এ ফল খেতে কোন বাধা নেই।
১২১
فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ ۚ وَعَصَىٰ آدَمُ رَبَّهُ فَغَوَىٰ
ফাআকালা-মিনহা-ফাবাদাত লাহুমা-ছাওআ-তুহুমা-ওয়া তাফিকা ইয়াখছিফা-নি ‘আলাইহিমা- মিওঁ ওয়ারাকিল জান্নাতি ওয়া ‘আসাআ-দামুরাব্বাহূফাগাওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর তারা সে গাছ থেকে কিছু খেয়ে ফেলল। ফলে তাদের লজ্জাস্থানসমূহ তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে গেল। তখন তারা জান্নাতের পাতা নিজেদের উপর জুড়তে লাগল। আর (এভাবে) আদম নিজ প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল ও বিভ্রান্ত হল। ৬০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান খুলে গেল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল। আদম তার পালনকর্তার অবাধ্যতা করল, ফলে সে পথ ভ্রষ্ঠ হয়ে গেল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর তারা উভয়ে তা হতে ভক্ষণ করল; তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে ভ্রমে পতিত হল।
তাফসীরঃ
৬০. সূরা বাকারায় আমরা লিখে এসেছি যে, এটা ছিল হযরত আদম আলাইহিস সালামের ইজতিহাদী ভুল। উপরে ১১৪ নং আয়াতে এর দিকেই ইশারা করে বলা হয়েছে, তার দ্বারা ভুল হয়ে গিয়েছিল। ইজতিহাদী ত্রুটি ও ভুলক্রমে যে কাজ করা হয়, তাতে গুনাহ হয় না। কিন্তু নবীদের মর্যাদা যেহেতু অনেক উপরে, তাই ইজতিহাদী ভুল হওয়াও তাদের পক্ষে শোভনীয় নয়, যদিও সাধারণের পক্ষে সেটা গুরুতর বিষয় নয়। এ কারণেই আয়াতে তাঁর এ ভুলকে ‘হুকুম অমান্য করা’ ও ‘বিভ্রান্ত হওয়া’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে এবং তার কারণেও তাওবা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
১২২
ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدَىٰ
ছু ম্মাজ তাবা-হু রাব্বুহূফাতা-বা ‘আলাইহি ওয়াহাদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন। সুতরাং তার তাওবা কবুল করলেন ও তাঁকে পথ দেখালেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এরপর তার পালনকর্তা তাকে মনোনীত করলেন, তার প্রতি মনোযোগী হলেন এবং তাকে সুপথে আনয়ন করলেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটার পর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন, তার তওবা কবুল করলেন ও তাকে পথনির্দেশ করলেন।
১২৩
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَىٰ
কা-লাহ বিতা-মিনহা-জামী‘আম বা‘দুকুম লিবা‘দিন ‘আদুওউন ফাইম্মাইয়া’তিইয়ান্নাকুম মিন্নী হুদান ফামানিততাবা‘আ হুদা-ইয়া ফালা-ইয়াদিল্লুওয়ালাইয়াশকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বললেন, তোমরা উভয়ে এখান থেকে নিচে নেমে যাও। তোমরা একে অন্যের শত্রু। ৬১ অতঃপর তোমাদের কাছে আমার পক্ষ হতে যদি কোন হিদায়াত পৌঁছে, তবে যে আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুঃখগ্রস্ত হবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি বললেনঃ তোমরা উভয়েই এখান থেকে এক সঙ্গে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়ে একই সঙ্গে জান্নাত হতে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না।
তাফসীরঃ
৬১. অর্থাৎ, মানুষ ও শয়তান একে অন্যের শত্রু হবে।
১২৪
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ
ওয়া মান আ‘রাদা‘আনযিকরী ফাইন্না লাহূমা‘ঈশাতান দানকাওঁ ওয়ানাহশুরুহূইয়াওমাল কিয়া-মাতি আ‘মা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সংকটময়। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাব। ৬২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।’
তাফসীরঃ
৬২. অর্থাৎ, যখন কবর থেকে তুলে হাশরে নেওয়া হবে তখন তারা অন্ধ থাকবে। অবশ্য পরে তাদেরকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, যেমন সূরা কাহাফের আয়াত দ্বারা জানা যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘তারা জাহান্নামের আগুন দেখবে’ (১৮ : ৫৩)।
১২৫
قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَىٰ وَقَدْ كُنتُ بَصِيرًا
কা-লা রাব্বি লিমা হাশারতানীআ‘মা-ওয়া কাদ কুনতুবাসীরা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে বলবে, হে রব্ব! তুমি আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম!
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুমান ছিলাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে ? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান।’
১২৬
قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا ۖ وَكَذَٰلِكَ الْيَوْمَ تُنسَىٰ
কা-লা কাযা-লিকা আতাতকা আ-য়া-তুনা-ফানাছীতাহা- ওয়া কাযা-লিকাল ইয়াওমা তুনছা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তােমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ সেভাবেই তােমাকে ভুলে যাওয়া হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি বলবেন, ‘এইরূপই আমার নিদর্শনাবলী তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়াছিলে এবং সেভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হলে।’
তাফসীরঃ
৬৩. অর্থাৎ তোমার কাছে আমার সুস্পষ্ট, সমুজ্জ্বল আয়াত ও নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা না দেখার ভান করেছিলে, সে ব্যাপারে অন্ধত্ব অবলম্বন করেছিলে এবং তা পরিত্যাগ করেছিলে ও ভুলে থেকেছিলে তাই আজ তার শাস্তিস্বরূপ তোমাকে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাকে পরিত্যক্ত ও বিস্মৃতরূপে রেখে দেওয়া হবে। -অনুবাদক
১২৭
وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِن بِآيَاتِ رَبِّهِ ۚ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَىٰ
ওয়া কাযা-লিকা নাজঝী মান আছরাফাওয়া লাম ইউ’মিম বিআ-য়া-তি রাব্বিহী ওয়ালা‘আযা-বুল আ-খিরাতি আশাদ্দুওয়া আবকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে ব্যক্তি সীমালংঘন করে ও নিজ প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে না, তাকে আমি এভাবেই শাস্তি দেই। আর আখেরাতের আযাব বাস্তবিকই বেশি কঠিন ও অধিকতর স্থায়ী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এমনিভাবে আমি তাকে প্রতিফল দেব, যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না করে। তার পরকালের শাস্তি কঠোরতর এবং অনেক স্থায়ী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং এভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে না। পরকালের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী।
১২৮
أَفَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّأُولِي النُّهَىٰ
আফালাম ইয়াহদি লাহুম কাম আহলাকনা-কাবলাহুম মিনাল কুরূনি ইয়ামশূনা ফী মাছাকিনিহিম ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিল লিউলিননুহা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর এ বিষয়টিও কি তাদেরকে হিদায়াতের কোন সবক দিল না যে, আমি তাদের আগে কত মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি, যাদের আবাসভূমিতে এরা চলাফেরা করে থাকে? নিশ্চয়ই যারা বিবেকসম্পন্ন, তাদের জন্য এ বিষয়ের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের বহু উপাদান আছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি এদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধবংস করেছি। যাদের বাসভুমিতে এরা বিচরণ করে, এটা কি এদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করল না? নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটাও কি তাদেরকে সৎপথ দেখাল না যে, আমি এদের পূর্বে ধ্বংস করেছি কত মানবগোষ্ঠী যাদের বাসভ‚মিতে এরা বিচরণ করে থাকে ? অবশ্যই এতে বিবেকসম্পন্নদের জন্যে আছে নিদর্শন।
১২৯
وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَكَانَ لِزَامًا وَأَجَلٌ مُّسَمًّى
ওয়ালাওলা-কালিমাতুন ছাবাকাত মির রাব্বিকা লাকা-না লিঝা-মাওঁ ওয়া আজালুম মুছাম্মা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে পূর্ব থেকেই যদি একটা কথা স্থিরীকৃত না থাকত এবং (তার ভিত্তিতে শাস্তির জন্য) একটা কাল নির্ধারিত না থাকত, তবে অবশ্যম্ভাবী শাস্তি (তাদেরকে) লেপটে ধরত। ৬৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত এবং একটি কাল নির্দিষ্ট না থাকলে শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে যেত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমার প্রতিপালকের পূর্বসিদ্ধান্ত ও একটা কাল নির্ধারিত না থাকলে অবশ্যম্ভাবী হত আশু শাস্তি।
তাফসীরঃ
৬৪. অর্থাৎ, কাফেরদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা একটি সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সে সময় না আসবে, তাদেরকে অবকাশ দেওয়া হতে থাকবে। এ কারণেই এত সব নাফরমানী ও অবাধ্যতা সত্ত্বেও কাফেরদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ হচ্ছে না। স্থিরীকৃত কথা বলতে নির্দিষ্ট সময় আসার আগে শাস্তি না দেওয়া বোঝানো হয়েছে। একথা যদি পূর্ব থেকে স্থিরীকৃত না থাকত, তবে তারা যে গুরুতর অপরাধ করছে, সেজন্য তাৎক্ষণিক শাস্তিতে তারা অবশ্যই আক্রান্ত হত।
১৩০
فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ۖ وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَىٰ
ফাসবির ‘আলা-মা-ইয়াকূলূনা ওয়া ছাব্বিহবিহামদি রাব্বিকা কাবলা তুলূ‘ইশশামছি ওয়া কাবলা গুরূবিহা- ওয়া মিন আ-নাইল্লাইলি ফাছাব্বিহওয়া আতরা-ফান্নাহা-রি লা‘আল্লাকা তারদা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং (হে নবী!) তারা যেসব কথা বলে, তাতে সবর কর এবং সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে নিজ প্রতিপালকের তাসবীহ ও হামদে রত থাক এবং রাতের মুহূর্তগুলোতেও তাসবীহতে রত থাক এবং দিনের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। ৬৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও দিবাভাগে, সম্ভবতঃ তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুতরাং এরা যা বলে, সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার।
তাফসীরঃ
৬৫. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্তনা দেওয়া হচ্ছে যে, কাফেরগণ আপনার বিরুদ্ধে যে বেহুদা কথাবার্তা বলে তার কোন উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং সবর করতে থাকুন ও আল্লাহ তাআলার তাসবীহ ও গুণকীর্তনে রত থাকুন। এর সর্বোত্তম পন্থা হল সালাত আদায়। কাজেই সূর্যোদয়ের আগে ফজরের নামায ও সূর্যাস্তের আগে আসরের নামায এবং রাতে ইশা ও তাহাজ্জুদের নামায আদায় করুন আর দিনের প্রান্তে পড়ুন মাগরিবের নামায। এ নিয়মে চললে আপনার পরিণাম ভালো হবে এবং আপনি আনন্দ লাভ করবেন। একে তো এ কারণে যে, এর কারণে আপনাকে যে পুরস্কার দেওয়া হবে তা অতি মহিমান্বিত ও সুবিপুল আর দ্বিতীয়ত এ কর্মপন্থা শত্রুর বিরুদ্ধে আপনার বিজয়কে নিশ্চিত করবে। তৃতীয়ত এর ফলে আপনি শাফায়াতের মহা মর্যাদায় আসীন হবেন। ফলে উম্মতের নাজাতপ্রাপ্তি আপনার মহানন্দের কারণ হবে।
১৩১
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
ওয়ালা-তামুদ্দান্না ‘আইনাইকা ইলা-মা-মাত্তা‘না-বিহীআঝওয়া-জাম মিনহুম ঝাহরাতাল হা-য়া-তিদ দুনইয়া- লিনাফতিনাহুম ফীহি ওয়া রিঝকুরাব্বিকা খাইরুওঁ ওয়া আবকা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি পার্থিব জীবনের ওই চাকচিক্যের দিকে চোখ তুলে তাকিও না, যা আমি তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) বিভিন্ন শ্রেণীকে মজা লোটার জন্য দিয়ে রেখেছি, তা দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। বস্তুত তোমার রব্বের রিযক সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সর্বাধিক স্থায়ী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি এদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্যে পার্থিবজীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি সেই সব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আপনার পালনকর্তার দেয়া রিযিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি তোমার চোখদ্বয় কখনও প্রসারিত কর না এর প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, তা দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে। তোমার প্রতিপালক-প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।
১৩২
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ۖ لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكَ ۗ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ
ওয়া’মুর আহলাকা বিসসালা-তি ওয়াসতাবির ‘আলাইহা- লা-নাছআলুকা রিঝকান নাহনুনারঝুকুকা ওয়াল ‘আ-কিবাতুলিত্তাকওয়া-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ কর এবং নিজেও তাতে অবিচলিত থাক। আমি তোমার কাছে রিযক চাই না। ৬৬ রিযক তো আমিই দেব। আর শুভ পরিণাম তো তাকওয়ারই।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোন রিযিক চাই না। আমি আপনাকে রিযিক দেই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও এতে অবিচলিত থাক, আমি তোমার নিকট কোন জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যে।
তাফসীরঃ
৬৬. অর্থাৎ দুনিয়ায় মনিব যেমন তার দাস-দাসীকে আয়-রোজগারের কাজে লাগিয়ে তাদের মেহনত দ্বারা নিজ জীবিকা সংগ্রহ করে, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তোমাদের সম্পর্ক সে রকমের নয়। তিনি বান্দার এ রকম বন্দেগী থেকে বেনিয়ায। বরং তিনি নিজের পক্ষ থেকেই তোমাদেরকে রিযক দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। আয়াতটির ব্যাখ্যা এরূপও করা যেতে পারে যে, আমি তোমাদের উপর তোমাদের নিজেদের রিযক সৃষ্টি করার দায়িত্ব ন্যস্ত করিনি। তোমরা বেশির বেশি যা করে থাক, তা কেবল এই যে, রিযকের জন্য আসবাব-উপকরণ অবলম্বন কর, যেমন মাটিতে বীজ বপণ করা। কিন্তু সেই বীজ থেকে চারা ও শস্য উৎপাদনের কাজ আমি তোমাদের দায়িত্বে ছাড়িনি, বরং আমি নিজেই তা সম্পন্ন করি এবং এভাবে তোমাদের রিযকের ব্যবস্থা করি।
১৩৩
وَقَالُوا لَوْلَا يَأْتِينَا بِآيَةٍ مِّن رَّبِّهِ ۚ أَوَلَمْ تَأْتِهِم بَيِّنَةُ مَا فِي الصُّحُفِ الْأُولَىٰ
ওয়া কা-লূলাওলা-ইয়া’তীনা-বিআ-য়াতিম মির রাব্বিহী আওয়ালাম তা’তিহিম বাইয়িনাতুমা-ফিসসুহুফিল ঊলা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলে, সে (অর্থাৎ নবী!) আমাদের কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে কোন নিদর্শন নিয়ে আসে না কেন? তবে কি তাদের কাছে পূর্ববর্তী (আসমানী) সহীফাসমূহে বর্ণিত বিষয়বস্তুর সাক্ষ্য আসেনি? ৬৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এরা বলেঃ সে আমাদের কাছে তার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন? তাদের কাছে কি প্রমাণ আসেনি, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে আছে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলে, ‘সে তার প্রতিপালকের নিকট হতে আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন ?’ এদের নিকট কি আসে নাই সুস্পষ্ট প্রমাণ যা আছে পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে ?
তাফসীরঃ
৬৭. এ আয়াতে بَيِّنَةٌ (সাক্ষ্য) দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে। ‘সহীফা’ হল পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব। এ আয়াতের ব্যাখ্যা দু’ভাবে করা যায়। (এক) কুরআন এমন এক কিতাব, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে যার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া হয়েছিল যে, আখেরী যামানায় এ কিতাব নাযিল করা হবে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, সে সব সহীফা কুরআন মাজীদের সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছিল। (দুই) কুরআন মাজীদ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে বর্ণিত বিষয়বস্তুর সমর্থন করে আর এভাবে এ কিতাব সেগুলোর আসমানী কিতাব হওয়ার সপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে, অথচ যার মুবারক মুখে এ বাণী উচ্চারিত হচ্ছে, সেই আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন উম্মী। তাঁর কাছে অতীতের কিতাবসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের কোন মাধ্যম নেই। তা সত্ত্বেও যখন তাঁর পবিত্র মুখে সেসব কিতাবের বিসয়বস্তু বিবৃত হচ্ছে, তখন এটা আপনিই প্রমাণ হয়ে যায় যে, এসব বিষয়বস্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতেই এসেছে এবং কুরআন মাজীদ তাঁরই কিতাব। এরপরও তোমরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের পক্ষে আর কী নিদর্শন দাবী করছ?
১৩৪
وَلَوْ أَنَّا أَهْلَكْنَاهُم بِعَذَابٍ مِّن قَبْلِهِ لَقَالُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ مِن قَبْلِ أَن نَّذِلَّ وَنَخْزَىٰ
ওয়া লাও আন্নাআহলাকনা-হুম বি‘আযা-বিম মিন কাবলিহী লাকা-লূরাব্বানা-লাওলা আরছালতা ইলাইনা-রাছূলান ফানাত্তাবি‘আ আ-ইয়া-তিকা মিন কাবলি আন নাযিল্লা ওয়া নাখঝা-।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি যদি তাদেরকে এর আগে (অর্থাৎ কুরআন নাযিলের আগে) কোন শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে তারা অবশ্যই বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের কাছে একজন রাসূল পাঠালেন না কেন, তাহলে তো আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার আগে আপনার আয়াতসমূহ অনুসরণ করতে পারতাম?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যদি আমি এদেরকে ইতিপূর্বে কোন শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে এরা বলতঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি আমাদের কাছে একজন রসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলে তো আমরা অপমানিত ও হেয় হওয়ার পূর্বেই আপনার নিদর্শন সমূহ মেনে চলতাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যদি আমি এদেরকে ইতিপূর্বে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করতাম তবে এরা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করলে না কেন ? করলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বে তোমার নিদর্শন মেনে চলিতাম।’
১৩৫
قُلْ كُلٌّ مُّتَرَبِّصٌ فَتَرَبَّصُوا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ أَصْحَابُ الصِّرَاطِ السَّوِيِّ وَمَنِ اهْتَدَىٰ
কুল কুল্লুম মুতারাব্বিসুন ফাতারাব্বাসূ ফাছাতা‘লামূনা মান আসহা-বুসসিরা-তিছ ছাবিইয়ি ওয়া মানিহতাদা-
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, (আমাদের) সকলেই প্রতীক্ষা করছে। সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা কর। ৬৮ কেননা তোমরা অচিরেই জানতে পারবে কারা সরল পথের অনুসারী এবং কারা হিদায়াতপ্রাপ্ত?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলুন, প্রত্যেকেই পথপানে চেয়ে আছে, সুতরাং তোমরাও পথপানে চেয়ে থাক। অদূর ভবিষ্যতে তোমরা জানতে পারবে কে সরল পথের পথিক এবং কে সৎপথ প্রাপ্ত হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বল, ‘প্রত্যেকেই প্রতীক্ষা করতেছে, সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা কর। এরপর তোমরা জানতে পারবে কাহারা রয়েছে সরল পথে এবং কারা সৎপথ অবলম্বন করেছে।’
তাফসীরঃ
৬৮. অর্থাৎ, দলীল-প্রমাণ তো সবই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখন বাকি রয়েছে কেবল আল্লাহ তাআলার ফায়সালা। আমরা তাঁর সেই ফায়সালার অপেক্ষায় আছি। তোমরাও তার অপেক্ষা করতে থাক। সেই সময় দূরে নয়, যখন প্রত্যেকের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে কোনটা খাঁটি আর কোনটা ভেজাল।
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads1)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)