Type Here to Get Search Results !

বদ মেজাজ, অতিরিক্ত রাগ কত ভয়াবহ একবার শুনেই ,রাগ কমানোর উপায়,রাগ কমানোর উপায় ও এর উপকারিকা কি আলোকিত ভুবন

আজকের বিষয়: রাগ সংবরণ করা ও ক্ষমা করা ইবাদত, রাগ ও সহনশীলতায় ইসলামের নির্দেশনা, ইসলামের শিক্ষা রাগ নিয়ন্ত্রণে ভারসাম্যপূর্ণ হতে সাহায্য করে, ইসলামে রাগ কমানোর উপায়,রাগ দমনের কিছু শরয়ি পদ্ধতি,রাগ সংবরণ করা ও ক্ষমা করা ইবাদত

রাগ একটি মানবীয় ত্রুটি। মানুষের চাহিদার বিপরীত হলে মানুষ রাগ করে থাকে। মানুষ হিসাবে কারো কাছে রাগ থাকা দোষের কিছু নয়। তবে রাগ দমন করতে না পারাটা দোষের। রাগ দমন করতে হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, ‘আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘রাগ করো না।’ সে ব্যক্তি কয়েকবার এ কথা বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘রাগ করো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১১৬)

(ads1)

রাগ দমনের কিছু পদ্ধতিও ইসলামী শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

‘রাগ’ ধ্বংস করে দিতে পারে জীবন, সম্পদ, সম্মান এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক। জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। এ কারণেই নবীজি (সা.) এটাকে বলেছেন, ‘আদম সন্তানের অন্তর একটি উত্তপ্ত কয়লা’ (তিরমিজি)। আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সত্কর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রচুর আত্মসংযম ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, যখন তাঁকে অপমান, অপদস্থ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)।

(ads2)

এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, “তুমি রাগ করো না”। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (সা.) প্রতিবারই বললেন, “রাগ করো না”।’ (বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)। এ ছাড়া নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে এমন অসংখ্য ঘটনা আমরা দেখতে পাই, যেগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, যখন রাগ আমাদের গ্রাস করতে চায় কিংবা আমরা রাগান্বিত অবস্থায় থাকি, তখন আমাদের কী করা উচিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া।’ (তিরমিজি)।

নবী করিম (সা.) আমাদের উপদেশ হিসেবে আরও বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ (আবু দাউদ)। এ ছাড়া নবীজি (সা.) শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বলেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) “আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম” অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (মুসলিম, অধ্যায়: ৩২, হাদিস: ৬৩১৭)।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


(ক) ‘আউজুবিল্লাহি মিনাস শায়তানির রাজিম’ দুয়াটি পড়া : সুলাইমান ইনবে সুরাদ (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দুজন লোক গালাগালি করল। আমরা তখন তাঁর কাছে বসে আছি। একজন অন্যজনকে গালি দিচ্ছে। গালি শুনে অপরজনের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি এমন একটা বাক্য জানি যা কেউ বললে তার রাগ উপশম হবে। তা হলো, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাস শায়তানির রাজিম’ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এক সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথাটা শুনলেন। সে সাথে সাথে গিয়ে ঝগড়ারত ব্যক্তিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথাটা শুনিয়ে বললেন, ‘তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ এ কথা শুনে লোকটির রাগ আরো বেড়ে গেল। তার হাত কাঁপতে লাগল। তারপর বলল, তুমি কি আমার মধ্যে কোনো প্রকার রাগ দেখতে পাচ্ছো? আমি কি পাগল? যাও, নিজের কাজে মনোযোগ দাও!’ (তিরমিযি, হাদিস নং-৩৪৫২)

(ads2)

(খ) শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন করা :  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস, হাদিস নং-৪৭৮৪)

(গ) অজু করা : নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয় পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস, হাদিস নং-৪৭৮৬)


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


(ঘ) চুপ থাকা : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস, হাদিস নং-৪৭৮৬)

(ads1)

(ঙ) দোয়া করা : কেননা আল্লাহই সব বিষয়ের তাওফিকদাতা। সঠিক পথে পরিচালনাকারী, দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ তাঁরই হাতে। আত্মা বিনষ্টকারী যাবতীয় অপবিত্রতা থেকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য তিনিই একমাত্র উত্তম সাহায্যকারী। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া  দেব।’ (সুরা গাফের, আয়াত-৬০)

(চ) অধিক হারে আল্লাহর জিকির করা : যেমন  কোরআন পাঠ, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ, ইস্তিগফার ইত্যাদি করা। কেননা মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, একমাত্র তাঁর জিকিরই অন্তরে প্রশান্তি আনতে পারে। তিনি বলেন, ‘জেনে রাখ আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।’ (সুরা রাদ, আয়াত-২৮)

(ads2)



(ছ) ক্রোধসংক্রান্ত আয়াত ও হাদিস চর্চা : যেসব আয়াত ও হাদিস ক্রোধ সংবরণ করার তরে উৎসাহ দেয় সেগুলো এবং যেগুলো ক্রোধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে সেগুলো মনে করা এবং ভালোভাবে হূদয়ঙ্গম করা। যেমন হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় ক্রোধকে সংবরণ করে, অথচ সে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম ছিল, তাকে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের ময়দানে সব মানুষের সামনে আহ্বান করবেন। অতঃপর জান্নাতের আনতনয়না হুর থেকে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে স্বাধীনতা দেবেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তাদের সাথে তার বিবাহ দিয়ে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস-৪১৭৬)

(জ) সঠিকভাবে দেহের হক আদায় করা : প্রয়োজনীয় নিদ্রা ও বিশ্রাম গ্রহণ করা, সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ না করা, অযথা উত্তেজিত না হওয়া।

(ads1)

(ঝ) আল্লাহকে ভয় করা : হজরত আলী (রা.) এক যুদ্ধে অমুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধানকে সম্মুখযুদ্ধে ধরাশায়ী করলেন এবং যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন, তখন তিনি আলী (রা.)-এর মুখে থুতু নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আলী (রা.) লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলেন। তখন ওই সেনাপ্রধান বললেন, ‘আপনি আমাকে হত্যা করতে পারতেন, কিন্তু তা করলেন না কেন?’ উত্তরে আলী (রা.) বললেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। আপনার সঙ্গে আমি যুদ্ধ করেছি শুধু আপনার অবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহের কারণে। আমার মুখে থুতু নিক্ষেপের পর আমি যদি আপনাকে হত্যা করতাম, তবে তা হয়ে পড়ত আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহার বহিঃপ্রকাশ, যা আমি কখনোই চাই না।’ (সাহাবা চরিত)

(ঞ) ক্রোধের যাবতীয় কারণ থেকে দূরে থাকা : যেসব কারণে ক্রোধ হতে পারে সেসব জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

(ads2)

একজন মুমিন হিসাবে আমাদের অবশ্যই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। আল্লাহ আমাদেরকে রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার তাওফিক দান করুক। আমিন।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  

আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড

Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !! 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.