২৩ . আল মু'মিনূন - ( المؤمنون ) | মুমিনগণ
মাক্কী, মোট আয়াতঃ ১১৮
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads1)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
১
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
কাদ আফলা হাল মু’মিনূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু’মিনগণ,
২
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
আল্লাযীনা হুম ফী সালা-তিহিম খা-শি‘ঊন,
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা তাদের নামাযে আন্তরিকভাবে বিনীত। ১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র;
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে,
তাফসীরঃ
১. এটা খুশু-এর অর্থ। আরবীতে খুযূ (خُضُوْعْ)-এর অর্থ বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নত করা আর খুশু (خُشُوْعْ) অর্থ অন্তরকে বিনয়ের সাথে নামাযের অভিমুখী রাখা। এর সহজ পন্থা হল, নামাযে মুখে যা পড়া হয় তার দিকে ধ্যান রাখা, অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন দিকে খেয়াল গেলে সেটা ধর্তব্য নয়। কিন্তু স্মরণ হওয়া মাত্র ফের নামাযের শব্দাবলীর প্রতি মনোযোগ দেওয়া চাই।
৩
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম ‘আনিল লাগবি মু‘রিদূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। ২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে,
তাফসীরঃ
২. لغو অর্থ অহেতুক কাজ, যাতে না দুনিয়ার কোন ফায়দা আছে, না আখেরাতের।
৪
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম লিঝঝাকা-তি ফা-‘ইলূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা যাকাত সম্পাদানকারী ৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা যাকাত দান করে থাকে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা যাকাতদানে সক্রিয়,
তাফসীরঃ
৩. ‘যাকাত’-এর আভিধানিক অর্থ পাক-পবিত্র করা। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর ফরয করেছেন যে, তারা যেন তাদের সম্পদের একটা অংশ গরীবদের দান করে। এটা ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত। পরিভাষায় একে যাকাত বলে। এই আর্থিক ইবাদতকে যাকাত বলার কারণ এর ফলে ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পদ পবিত্র হয়ে যায় এবং পরিশুদ্ধ হয় তার অন্তরও। এস্থলে যাকাত দ্বারা যেমন আর্থিক প্রদেয়কে বোঝানো হতে পারে তেমনি বোঝানো হতে পারে ‘তাযকিয়া’-ও। তাযকিয়া মানে নিজেকে মন্দ কাজ ও মন্দ চরিত্র থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। কুরআন মাজীদ এস্থলে ‘যাকাত আদায়কারী’ না বলে যে ‘যাকাত সম্পাদনকারী’ বলেছে, এ কারণে অনেক মুফাসসির দ্বিতীয় অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
৫
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম লিফুরূজিহিম হা-ফিজূ ন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা নিজ লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে ৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে,
তাফসীরঃ
৪. অর্থাৎ, যৌন চাহিদা পূরণের জন্য কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে না আর এভাবে নিজ লজ্জাস্থানকে তা থেকে হেফাজত করে।
৬
إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
ইল্লা-‘আলাআঝওয়া-জিহিম আও মা-মালাকাত আইমা-নুহুম ফাইন্নাহুম গাইরু মালূমীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিজেদের স্ত্রী ও তাদের মালিকানাধীন দাসীদের ছাড়া অন্য সকলের থেকে, ৫ কেননা এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
নিজেদের পত্নী বা অধিকারভুক্ত দাসিগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না,
তাফসীরঃ
৫. এর দ্বারা এমন দাসীদেরকে বোঝানো হয়েছে, যারা শরয়ী বিধান অনুসারে কারও মালিকানাধীন হয়ে গেছে। অবশ্য বর্তমানে এ রকম দাসীর কোন অস্তিত্ব কোথাও নেই।
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads1)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)
৭
فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
ফামানিবতাগা-ওয়ারাআ যা-লিকা ফাউলাইকা হুমুল ‘আ-দূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কেউ এ ছাড়া অন্য কিছু কামনা করলে তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী। ৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী,
তাফসীরঃ
৬. অর্থাৎ, স্ত্রী ও শরীয়তসম্মত দাসী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে লিপ্ত হয়ে যৌন চাহিদা পূরণ করা যেহেতু হারাম, তাই কেউ যদি অন্যতে লিপ্ত হতে চায়, তবে সে শরীয়তের সীমা অতিক্রমকারী সাব্যস্ত হবে।
৮
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
ওয়াল্লা যীনা হুম লিআমা-না-তিহিম ওয়া‘আহদিহিম রা-‘ঊন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং যারা তাদের আমানত ৭ ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে,
তাফসীরঃ
৭. ‘আমানত’ কথাটি অতি ব্যাপক। এর দ্বারা যেমন বান্দার প্রতি আরোপিত আল্লাহর আমানত বোঝানো হয়েছে, যথা ঈমান-আকীদা, ওহীর ইলম, সৃষ্টিগত যোগ্যতা ইত্যাদি, তেমনি মানুষের পারস্পরিক আমানতও, যথা গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ, প্রার্থিত রায় ও পরামর্শ, গোপন কথাবার্তা, অর্পিত পদমর্যাদা ও দায়-দায়িত্ব ইত্যাদি। -অনুবাদক
৯
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম ‘আলা-সালাওয়া-তিহিম ইউহা-ফিজূ ন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং যারা নিজেদের নামাযের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে ৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং যারা তাদের নামাযসমূহের খবর রাখে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যারা নিজেদের সালাতসমূহে যতèবান থাকে,
তাফসীরঃ
৮. নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ কথাটির অর্থ অতি ব্যাপক। যথাসময়ে নামায পড়া, নামাযের শর্ত, আদব ও অন্যান্য নিয়মাবলী রক্ষায় যত্নবান থাকা, সুন্দর ও সুচারুরূপে নামায আদায় করা, সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
১০
أُولَـٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
উলাইকা হুমুল ওয়া-রিছূ ন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এরাই হল সেই ওয়ারিশ,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তারাই হবে অধিকারী-
১১
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
আল্লাযীনা ইয়ারিছূনাল ফিরদাউছা হুম ফীহা-খা-লিদূ ন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের মীরাস লাভ করবে। ৯ তারা তাতে সর্বদা থাকবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অধিকারী হবে ফিরদাওসের যাতে এরা স্থায়ী হবে।
তাফসীরঃ
৯. জান্নাতকে মুমিনদের মীরাস বলা হয়েছে এ কারণে যে, মালিকানা লাভের যতগুলো সূত্র আছে তার মধ্যে ‘মীরাস’ সূত্রটি অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সম্পদ এ সূত্রে আপনা-আপনিই ব্যক্তির মালিকানায় এসে যায় এবং এসে যাওয়ার পর আর সে মালিকানা লুপ্ত হওয়ার কোন অবকাশ নেই। ইশারা করা হচ্ছে, জান্নাত লাভের পর পাছে তার থেকে তা কেড়ে নেওয়া হয় মুমিন ব্যক্তির এরূপ কোন ভয় থাকবে না। নিশ্চিত মনে সে অনন্তকাল তাতে বসবাস করতে থাকবে।
১২
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ
ওয়ালাকাদ খালাকনাল ইনছা-না মিন ছুলা-লাতিম মিন তীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ দ্বারা। ১০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে,
তাফসীরঃ
১০. মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করার এক অর্থ তো এই যে, আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর তার ঔরস থেকে প্রজন্ম পরম্পরায় মানুষ জন্মলাভ করেছে। অর্থাৎ, সরাসরি মাটির সৃষ্টি কেবল হযরত আদম আলাইহিস সালাম আর বাকি সকলে মাটির সৃষ্টি তাঁর মাধ্যমে। এর দ্বিতীয় অর্থ হল, মানুষ সৃষ্টির সূচনা হয় শুক্রবিন্দু হতে। শুক্রের মূল খাদ্য আর খাদ্য উৎপাদনে মাটির ভূমিকাই প্রধান। সুতরাং পরোক্ষভাবে সমস্ত মানুষ মাটির সৃষ্টি।
১৩
ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَّكِينٍ
ছু ম্মা জা‘আলনা-হু নুতফাতান ফী কারা-রিম মাকীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর তাকে স্খলিত বিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত স্থানে রাখি। ১১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর আমি একে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে;
তাফসীরঃ
১১. সংরক্ষিত স্থান হল মায়ের গর্ভ।
১৪
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ ۚ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
ছু ম্মা খালাকনান নুতফাতা ‘আলাকাতান ফাখালাকনাল ‘আলাকাতা মুদগাতান ফাখালাকনাল মুদগাতা ‘ইজা-মান ফাকাছাওনাল ‘ইজা-মা লাহমান ছু ম্মা আনশা’না-হু খালকান আ-খারা ফাতাবা-রাকাল্লা-হু আহছানুল খা-লিকীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর আমি সেই বিন্দুকে জমাট রক্তে ১২ পরিণত করি। তারপর সেই জমাট রক্তকে গোশতপিণ্ড বানিয়ে দেই। তারপর সেই গোশতপিণ্ডকে অস্থিতে রূপান্তরিত করি। তারপর অস্থিরাজিতে গোশতের আচ্ছাদন লাগিয়ে দেই। তারপর তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি ১৩। বস্তুত সকল কারিগরের শ্রেষ্ঠ কারিগর আল্লাহ কত মহান!
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি আলাক-এ, এরপর আলাক্কে পরিণত করি পিণ্ডে এবং পিণ্ডকে পরিণত করি অস্থি-পঞ্জরে ; এরপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢাকিয়া দেই গোশ্ত দিয়ে; অবশেষে একে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান!
তাফসীরঃ
১২. عَلَقَةً এর অর্থ জমাট রক্ত, সংযুক্ত, ঝুলন্ত ইত্যাদি। সাধারণ মুফাসসিরগণ এর অর্থ করেছেন জমাট রক্ত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান মতে মাতৃগর্ভের ভ্রুণের যে ক্রমবিকাশ হয়, তাতে প্রথম দিকে পুরুষের শুক্র ও নারীর ডিম্বাণু মিলিত হয়ে জরায়ুর গায়ে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। এ হিসেবে আলাকা হল সম্মিলিতরূপে শুক্র ও ডিম্বাণুর জরায়ু-সংলগ্ন সেই অবস্থার নাম। -অনুবাদক
১৫
ثُمَّ إِنَّكُم بَعْدَ ذَٰلِكَ لَمَيِّتُونَ
ছু ম্মা ইন্নাকুম বা‘দা যা-লিকা লামাইয়িতূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর এসবের পর অবশ্যই তোমাদের মৃত্যু ঘটবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটার পর তোমরা অবশ্যই মরবে,
১৬
ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ
ছু ম্মা ইন্নাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি তুব‘আছূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে।
১৭
وَلَقَدْ خَلَقْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعَ طَرَائِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ
ওয়া লাকাদ খালাকনা-ফাওকাকুম ছাব‘আ তারাইকা ওয়ামা-কুন্না-‘আনিল খালকিগা-ফিলীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তোমাদের উপর সৃষ্টি করেছি সাত স্তরবিশিষ্ট পথ। আর সৃষ্টি সম্বন্ধে আমি উদাসীন নই। ১৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি তোমাদের উপর সুপ্তপথ সৃষ্টি করেছি এবং আমি সৃষ্টি সম্বন্ধে অনবধান নই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো তোমাদের ঊর্ধ্বে সৃষ্টি করেছি সপ্তস্তর এবং আমি সৃষ্টি বিষয়ে অসতর্ক নই,
তাফসীরঃ
১৩. ‘অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি’ অর্থাৎ তারপর তার মধ্যে রূহ ফুকে দেই। ফলে সে এক জ্যান্ত-জাগ্রত মানুষে পরিণত হয়। ছিল জড়, হয়ে গেল প্রাণবন্ত, ছিল মূক হয়ে গেল সবাক, এমনিভাবে হয়ে গেল দ্রষ্টা, শ্রোতা এবং আরও কত কি! তারপর তার মধ্যে শৈশব, কৈশোর , যৌবন, বার্ধক্যের নানাবিধ অবস্থান্তর ঘটে। -অনুবাদক
১৪. এখানে সাত আকাশকে ‘সাত স্তরবিশিষ্ট পথ’ বলা হয়েছে। কারণ, আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাগণ আকাশমণ্ডল থেকেই আসা যাওয়া করে। এ হিসেবে আকাশমণ্ডল তাদের পথ। আয়াতের শেষে যে বলা হয়েছে ‘আমি সৃষ্টি সম্বন্ধে উদাসীন নই’, এর মানে কোন সৃষ্টির কী প্রয়োজন, তাদের কল্যাণ কিসে নিহিত, সে সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত। কাজেই আমার যাবতীয় সৃজনকর্ম সে দিকে লক্ষ রেখেই সম্পাদিত হয়।
১৮
وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ ۖ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
ওয়া আনঝালনা-মিনাছ ছামাই মাআম বিকাদারিন ফাআছকান্না-হু ফিল আরদি ওয়া ইন্না-‘আলা-যাহা-বিম বিহী লাকা-দিরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে বারি বর্ষণ করি, তারপর তা ভূমিতে সংরক্ষণ করি। ১৫ নিশ্চয়ই আমি তা অপসারণ করতেও সক্ষম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে; এরপর আমি তা মৃত্তিকায় সংরক্ষণ করি; আমি একে অপসারিত করতেও সক্ষম।
তাফসীরঃ
১৫. অর্থাৎ, আকাশ থেকে আমি যে বৃষ্টি বর্ষণ করি তোমাদেরকে যদি তা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব দেওয়া হত, তবে তোমাদের পক্ষে তা সম্ভব হত না। আমি এ পানি পাহাড়-পর্বতে বর্ষণ করে বরফ আকারে জমা করে রাখি। তারপর সে বরফ গলে-গলে নদ- নদীর সৃষ্টি হয়। তা থেকে শিরা-উপশিরারূপে সে পানি ভূগর্ভে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাটির স্তরে-স্তরে তা জমা হয়ে থাকে। কোথাও কুয়া ও প্রস্রবণের সৃষ্টি হয়।
১৯
فَأَنشَأْنَا لَكُم بِهِ جَنَّاتٍ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيهَا فَوَاكِهُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
ফাআনশা’না-লাকুম বিহী জান্না-তিম মিন নাখীলিওঁ ওয়া ‘আনা-ব । লাকুম ফীহা-ফাওয়াকিহু কাছী রাতুওঁ ওয়া মিনহা-তা’কুলূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান উৎপন্ন করি, যা দ্বারা তোমাদের প্রচুর ফল অর্জিত হয় এবং তা থেকেই তোমরা খাও।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্যে খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্যে এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর আমি তা দিয়ে তোমাদের জন্যে খর্জুর ও আংগুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্যে আছে প্রচুর ফল; আর তা হতে তোমরা আহার করে থাক;
২০
وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِن طُورِ سَيْنَاءَ تَنبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْآكِلِينَ
ওয়া শাজারাতান তাখরুজুমিন তূরি ছাইনাআ তামবুতুবিদ্দুহনি ওয়াছিবগিল লিলআ-কিলীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং সৃষ্টি করি সেই বৃক্ষও, যা সিনাই পর্বতে জন্ম নেয় ১৬ এবং যা আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জনসহ উৎপন্ন হয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং ঐ বৃক্ষ সৃষ্টি করেছি, যা সিনাই পর্বতে জন্মায় এবং আহারকারীদের জন্যে তৈল ও ব্যঞ্জন উৎপন্ন করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় তৈল এবং আহারকারীদের জন্যে ব্যঞ্জন।
তাফসীরঃ
১৬. এর দ্বারা যায়তুন গাছ বোঝানো হয়েছে। সাধারণত এ গাছ সিনাই পাহাড়ের এলাকাতেই বেশি জন্মায়। এর থেকে যে তেল উৎপন্ন হয়, তা যেমন তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তেমনি আরব দেশসমূহে রুটির সাথে ব্যঞ্জনরূপেও এর বহুল ব্যবহার আছে। এস্থলে আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে বিশেষভাবে যয়তুন বৃক্ষের উল্লেখ করেছেন এ কারণে যে, এর উপকারিতা বহুবিধ।
২১
وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهَا وَلَكُمْ فِيهَا مَنَافِعُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
ওয়া ইন্না লাকুম ফিল আন‘আ-মি লা‘ইবরাতান নুছকীকুম মিম্মা-ফী বুতূনিহা-ওয়া লাকুম ফীহা-মানা-ফি‘উ কাছীরাতুওঁ ওয়া মিনহা-তা’কুলূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য গবাদি পশুতে আছে শিক্ষা। তার উদরে যা আছে তা (অর্থাৎ দুধ) থেকে আমি তোমাদেরকে পান করাই এবং তার মধ্যে তোমাদের জন্য আছে বহু উপকারিতা আর তা থেকে তোমরা খাদ্য গ্রহণ কর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু সমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তোমাদের জন্যে অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে আন‘আম-এ; তোমাদেরকে আমি পান করাই এদের উদরে যা আছে তা হতে এবং এতে তোমাদের জন্যে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা; তোমরা তা হতে আহার কর,
২২
وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُونَ
ওয়া ‘আলাইহা-ওয়া ‘আলাল ফুলকি তুহমালূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তাতে ও নৌযানে তোমাদেরকে সওয়ারও করানো হয়ে থাকে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাদের পিঠে ও জলযানে তোমরা আরোহণ করে চলাফেরা করে থাক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তোমরা এতে ও নৌযানে আরোহণও করে থাক।
২৩
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۖ أَفَلَا تَتَّقُونَ
ওয়া লাকাদ আরছালনা-নূহান ইলা-কাওমিহী ফাকা-লা ইয়া-কাওমি‘বুদল্লা-হা মালাকুম মিন ইলা-হিন গাইরুহূ আফালা-তাত্তাকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সুতরাং সে (তার সম্প্রদায়কে) বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মাবুদ নেই। তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ নেই। তোমরা কি ভয় কর না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো নূহ্কে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট। সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্ র ‘ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না ?’
২৪
فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ مَا هَـٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُرِيدُ أَن يَتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَأَنزَلَ مَلَائِكَةً مَّا سَمِعْنَا بِهَـٰذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ
ফাকা-লাল মালাউল্লাযীনা কাফারূমিন কাওমিহী মা-হা-যাইল্লা-বাশারুম মিছলুকুম ইউরীদুআইঁ ইয়াতাফাদ্দালা ‘আলাইকুম ওয়া লাও শাআল্লা-হু লাআনঝালা মালাইকাতাম মা-ছামি‘না-বিহা-যা-ফীআ-বাইনাল আওওয়ালীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তখন তার সম্প্রদায়ের কাফের প্রধানগণ (একে অপরকে) বলল, এই ব্যক্তি তোমাদেরই মত একজন মানুষ ছাড়া তো কিছু নয়। সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চায়। আল্লাহ চাইলে কোন ফেরেশতাই নাযিল করতেন। আমরা তো এমন কথা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে কখনও শুনিনি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তখন তার সম্প্রদায়ের কাফের-প্রধানরা বলেছিলঃ এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। সে তোমাদের উপর নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই নাযিল করতেন। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এরূপ কথা শুনিনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল, ‘এ তো তোমাদের মত একজন মানুষই, তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই পাঠাতেন; আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষগণের কালে এইরূপ ঘটেছে, একথা শুনি নাই।
২৫
إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ بِهِ جِنَّةٌ فَتَرَبَّصُوا بِهِ حَتَّىٰ حِينٍ
ইন হুওয়া ইল্লা-রাজুলুম বিহী জিন্নাতুন ফাতারাব্বাসুবিহী হাত্তা-হীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(প্রকৃতপক্ষে এ লোকটির ব্যাপার এই যে,) সে এমনই এক লোক, যার উন্মত্ততা দেখা দিয়েছে। সুতরাং তার ব্যাপারে তোমরা কিছুকাল অপেক্ষা করে দেখ (হয়ত তার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে)।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে তো এক উম্মাদ ব্যক্তি বৈ নয়। সুতরাং কিছুকাল তার ব্যাপারে অপেক্ষা কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এ তো এমন লোক যাকে উন্মত্ততা পেয়ে বসেছে; সুতরাং তোমরা এটার সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা কর।’
২৬
قَالَ رَبِّ انصُرْنِي بِمَا كَذَّبُونِ
কা-লা রাব্বিনসুরনী বিমা-কাযযাবূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নূহ বলল, হে আমার প্রতিপালক! তারা যে আমাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছে, তাতে তুমিই আমাকে সাহায্য কর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নূহ বলেছিলঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর; কেননা, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
নূহ্ বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ এরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলিতেছে।’
২৭
فَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِ أَنِ اصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا فَإِذَا جَاءَ أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ ۙ فَاسْلُكْ فِيهَا مِن كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ مِنْهُمْ ۖ وَلَا تُخَاطِبْنِي فِي الَّذِينَ ظَلَمُوا ۖ إِنَّهُم مُّغْرَقُونَ
ফাআওহাইনা ইলাইহি আনিসনা‘ইল ফুলকা বিআ‘ইউনিনা-ওয়া ওয়াহয়িনা-ফাইযাজাআ আমরুনা-ওয়া ফা-রাততাননূরূ ফাছলুক ফীহা-মিন কুলিন ঝাওজাইনিছনাইনি ওয়া আহ লাকা ইল্লা-মান ছাবাকা ‘আলাইহিল কাওলুমিনহুম ওয়ালা-তুখা-তিবনী ফিল্লাযীনা জালামূ ইন্নাহুম মুগরাকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আমি তার কাছে ওহী পাঠালাম, তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহী অনুসারে নৌযান নির্মাণ কর। তারপর যখন আমার হুকুম আসবে এবং তান্নুর ১৭ উথলে উঠবে তখন প্রত্যেক জীব থেকে এক-এক জোড়া নিয়ে তা সেই নৌযানে তুলে নিও ১৮ এবং নিজ পরিবারবর্গকেও, তবে যাদের বিরুদ্ধে আগেই সিদ্ধান্ত স্থির হয়ে গেছে তাদেরকে নয়। ১৯ আর সে জালেমদের সম্বন্ধে আমার সঙ্গে কোন কথা বলবে না। নিশ্চয়ই তাদেরকে নিমজ্জিত করা হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর আমি তার কাছে আদেশ প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরী কর। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও, প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর আমি তার নিকট ওহী পাঠালাম, ‘তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহী অনুযায়ী নৌযান নির্মাণ কর, এরপর যখন আমার আদেশ আসবে ও উনুন উথলে উঠবে তখন উঠিয়ে নিও প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে, তাদেরকে ছাড়া তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বল না যারা জুলুম করেছে। তারা তো নিমজ্জিত হবে।
তাফসীরঃ
১৭. ‘তান্নুর’-এর এক অর্থ চুলা, অন্য অর্থ ভূপৃষ্ঠ। কোন কোন রিওয়ায়াতে প্রকাশ যে, হযরত নূহ আলাইহিস সালামের সময়কার প্লাবন শুরু হয়েছিল চুলা থেকে। একদিন দেখা গেল চুলা থেকে পানি উথলে উঠছে এবং উপর থেকেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেখতে দেখতে তা ভয়াবহ প্লাবনের আকার ধারণ করল। হযরত নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা বিস্তারিতভাবে সূরা হুদ (১১ : ২৫-৪৮)-এ চলে গেছে।
১৮. প্রত্যেক জীব থেকে এক-এক জোড়া তুলে নিতে বলা হয়েছিল এ কারণে, যাতে মানুষের প্রয়োজনীয় জীব-জন্তুর বংশধারা রক্ষা পায়।
১৯. এর দ্বারা হযরত নূহ আলাইহিস সালামের খান্দানের যেসব লোক তখনও পর্যন্ত ঈমান আনেনি এবং তাদের নসীবেও ঈমান ছিল না, তাদেরকে বোঝানো হয়েছে, যেমন হযরত নূহ আলাইহিস সালামের পুত্র কিনআন। সূরা হুদে তার ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
২৮
فَإِذَا اسْتَوَيْتَ أَنتَ وَمَن مَّعَكَ عَلَى الْفُلْكِ فَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَجَّانَا مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
ফাইযাছ তাওয়াইতা আনতা ওয়া মাম মা‘আকা ‘আলাল ফুলকি ফাকুল্লি হামদুলিল্লা-হি ল্লাযী নাজ্জা-না-মিনাল কাওমিজ্জা-লিমীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারপর যখন তুমি এবং তোমার সঙ্গীগণ নৌযানে ঠিকঠাক হয়ে বসে যাবে, তখন বলবে, শুকর আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে জালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় আরোহণ করবে, তখন বলঃ আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদেরকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌযানে আসন গ্রহণ করবে তখন বল, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ র ই, যিনি আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন জালিম সম্প্রদায় হতে।’
২৯
وَقُل رَّبِّ أَنزِلْنِي مُنزَلًا مُّبَارَكًا وَأَنتَ خَيْرُ الْمُنزِلِينَ
ওয়া কুর রাব্বি আনঝিলনী মুনঝালাম মুবা-রাকাওঁ ওয়া আনতা খাইরুল মুনঝিলীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে অবতরণ করাও বরকতময় অবতারণে। আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আরও বলঃ পালনকর্তা, আমাকে কল্যাণকর ভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আরও বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও যা হবে কল্যাণকর; আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী।’
৩০
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ وَإِن كُنَّا لَمُبْتَلِينَ
ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিওঁ ওয়া ইন কুন্না-লামুবতালীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই এতে আছে বহু নিদর্শন। আর আমি তো তোমাদেরকে পরীক্ষা করারই ছিলাম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এবং আমি পরীক্ষাকারী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। আর আমি তো এদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম।
৩১
ثُمَّ أَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ
ছু ম্মা আশা’না-মিম বা‘দিহিম কারনান আ-খারীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর আমি তাদের পর অন্য মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করলাম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর অন্য এক সম্প্রদায় আমি তার স্থলাভিষিক্ত করেছিলাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর তাদের পরে অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম;
৩২
فَأَرْسَلْنَا فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۖ أَفَلَا تَتَّقُونَ
ফাআরছালনা-ফীহিম রাছূলাম মিনহুম আনি‘ বুদুল্লা-হা মা-লাকুম মিন ইলা-হিন গাইরুহূ আফালা-তাত্তাকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তাদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠালাম, ২০ সে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মাবুদ নেই। তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তাদেরই একজনকে তাদের মধ্যে রসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন মাবুদ নেই। তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং এদেরই একজনকে এদের নিকট রাসূল করে পাঠিয়েছিলাম! সে বলেছিল, ‘তোমরা আল্লাহ্ র ‘ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না ?’
তাফসীরঃ
২০. ‘তাদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠালাম’। ইনি কোন নবী কুরআন মাজীদ তা স্পষ্ট করে বলেনি। তবে ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এটাই বেশি পরিষ্কার মনে হয় যে, ইনি ছিলেন হযরত সালিহ আলাইহিস সালাম। তাকে ছামূদ জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল। কেননা সামনে ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা হয়েছিল বিকট আওয়াজ দ্বারা। আর অন্যান্য সূরায় আছে হযরত সালিহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়কেই বিকট আওয়াজ দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল। কোন কোন মুফাসসির এ সম্ভাবনাও ব্যক্ত করেছেন যে, সম্ভবত এখানে হযরত হুদ আলাইহিস সালামের কথা বলা হয়েছে, যাকে আদ জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল।এ হিসেবে اَلصَّيْحَةُ হবে এমন প্রলয়ঙ্কারী ঝড়, যার সাথে বিকট আওয়াজও ছিল। এ উভয় জাতির ঘটনা সূরা আরাফ (৭ : ৬৫, ৭৩) ও সূরা হুদ (১১ : ৫০, ৬১)-এ বর্ণিত হয়েছে।
৩৩
وَقَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِلِقَاءِ الْآخِرَةِ وَأَتْرَفْنَاهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هَـٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُونَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُونَ
ওয়া কা-লাল মালাউ মিন কাওমিহিল্লাযীনা কাফারূওয়া কাযযাবূবিলিকাইল আখিরাতি ওয়া আতরাফনা-হুম ফিল হায়া-তিদ দুনইয়া- মা হা-যাইল্লা-বাশারুম মিছলুকুম ইয়া’কুলু মিম্মা-তা’কুলূনা মিনহু ওয়া ইয়াশরাবুমিম্মা-তাশরাবূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফর অবলম্বন করেছিল ও আখেরাতের সাক্ষাৎকারকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগ-সামগ্রী দিয়েছিলাম, তারা একে অন্যকে) বলল, এই ব্যক্তি তো তোমাদেরই মত একজন মানুষ। তোমরা যা খাও সে তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর সেও তাই পান করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা যারা কাফের ছিল, পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা বলত এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছিলাম, তারা বললঃ এতো আমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফরী করেছিল ও আখিরাতের সাক্ষাৎকারকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি দিয়েছিলাম পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগসম্ভার, তারা বলেছিল, ‘এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ; তোমরা যা আহার কর, সে তাই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে;
৩৪
وَلَئِنْ أَطَعْتُم بَشَرًا مِّثْلَكُمْ إِنَّكُمْ إِذًا لَّخَاسِرُونَ
ওয়া লাইন আতা‘তুম বাশারাম মিছলাকুম ইন্নাকুম ইযাল লাখা-ছিরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা যদি তোমাদেরই মত একজন মানুষের আনুগত্য করে বস, তবে তোমরা নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যদি তোমরা তোমাদেরই মত একজন মানুষের আনুগত্য কর তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে;
৩৫
أَيَعِدُكُمْ أَنَّكُمْ إِذَا مِتُّمْ وَكُنتُمْ تُرَابًا وَعِظَامًا أَنَّكُم مُّخْرَجُونَ
আইয়া‘ইদুকুমআন্নাকুমইযা-মিততুমওয়াকনতুমতুরা-বাওঁ ওয়া ‘ইজা-মান আন্নাকুম মুখরাজূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে কি তোমাদেরকে এই ভয় দেখায় যে, তোমরা যখন মারা যাবে এবং মাটি ও অস্থিতে পরিণত হবে, তখন তোমাদেরকে পুনরায় (মাটি থেকে) বের করা হবে?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে কি তোমাদেরকে এই ওয়াদা দেয় যে, তোমরা মারা গেলে এবং মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলে তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘সে কি তোমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতিই দেয় যে, তোমাদের মৃত্যু হলে এবং তোমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলেও তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে ?
৩৬
۞ هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ لِمَا تُوعَدُونَ
হাইহা-তা হাই-হাতা লিমা-তূ‘আদূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমাদেরকে যে বিষয়ের ভয় দেখান হচ্ছে, সেটা তো সম্পূর্ণ অসম্ভব ও অকল্পনীয় ব্যাপার।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হচ্ছে, তা কোথায় হতে পারে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘অসম্ভব, তোমাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা অসম্ভব।
৩৭
إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ
ইন হিয়া ইল্লা-হায়া-তুনাদ দুনইয়া-নামূতুওয়া নাহইয়া-ওয়ামা-নাহনুবিমাব‘উছীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
জীবন তো এই ইহজীবনই, আর কিছু নয়। (এখানেই) আমরা মরি ও বাঁচি। আমাদেরকে ফের জীবিত করা যাবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমাদের পার্থিবজীবনই একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই এবং আমারা পুনরুত্থিত হবো না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি বাঁচি এখানেই এবং আমরা উত্থিত হব না।
৩৮
إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا وَمَا نَحْنُ لَهُ بِمُؤْمِنِينَ
ইন হুওয়া ইল্লা-রাজুলুনিফতারা-‘আলাল্লা-হি কাযিবাও ওয়ামা-নাহনুলাহূবিমু’মিনীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(আর এই যে ব্যক্তি) এ তো এমনই এক লোক, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। আমরা এর প্রতি ঈমান আনার নই।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে তো এমন ব্যক্তি বৈ নয়, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করি না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘সে তো এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করার নই।’
৩৯
قَالَ رَبِّ انصُرْنِي بِمَا كَذَّبُونِ
কা-লা রাব্বিনসুরনী বিমা-কাযযাবূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নবী বলল, হে আমার প্রতিপালক! তারা যে আমাকে মিথ্যুক ঠাওরিয়েছে, সে ব্যাপারে তুমিই আমাকে সাহায্য কর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর; কারণ এরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে।’
৪০
قَالَ عَمَّا قَلِيلٍ لَّيُصْبِحُنَّ نَادِمِينَ
কা-লা ‘আম্মা-কালীলিল লাইউসবিহুন্না না-দিমীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বললেন, অল্পকালের ভেতরই তারা নিশ্চিত অনুতপ্ত হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বললেনঃ কিছু দিনের মধ্যে তারা সকাল বেলা অনুতপ্ত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ বললেন, ‘অচিরে এরা তো অনুতপ্ত হবে।’
৪১
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ بِالْحَقِّ فَجَعَلْنَاهُمْ غُثَاءً ۚ فَبُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
ফাআখাযাতহুমুসসাইহাতুবিলহাক্কিফাজা‘আলনা-হুম গুছাআন ফাবু‘দাল লিলকাওমিজ্জা-লিমীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং সত্যিই ২১ তাদেরকে এক মহানাদ আক্রান্ত করে এবং আমি তাদেরকে আবর্জনায় পরিণত করি। সুতরাং এরূপ জালেম সম্প্রদায়ের প্রতি অভিশাপ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর সত্য সত্যই এক ভয়ংকর শব্দ তাদেরকে হতচকিত করল এবং আমি তাদেরকে বাত্যা-তাড়িত আবর্জনা সদৃশ করে দিলাম। অতঃপর ধ্বংস হোক পাপী সম্প্রদায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর সত্য সত্যই এক বিকট আওয়াজ এদেরকে আঘাত করল এবং আমি এদেরকে তরঙ্গ-তাড়িত আবর্জনাসদৃশ করে দিলাম। সুতরাং ধ্বংস হয়ে গেল জালিম সম্প্রদায়।
তাফসীরঃ
২১. ‘সত্যিই’, অর্থাৎ উপরে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা সত্য ছিল এবং সে অনুযায়ী সত্যিই এক মহানাদ তাদেরকে আঘাত করেছিল। অথবা এর অর্থ, ‘এক মহানাদ তাদেরকে আঘাত করেছিল ন্যায্যভাবে। তা তাদের উপর জুলুম ছিল না আদৌ। -অনুবাদক
৪২
ثُمَّ أَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قُرُونًا آخَرِينَ
ছু ম্মা আনশা’না-মিম বা‘দিহিম কুরুনান আ-খারীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর আমি তাদের পর অন্যান্য মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এরপর তাদের পরে আমি বহু সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর তাদের পরে আমি বহু জাতি সৃষ্টি করেছি।
৪৩
مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ
মা-তাছবিকুমিন উম্মাতিন আজালাহা-ওয়ামা-ইয়াছতা’খিরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কোন জাতিই তার নির্ধারিত কালের আগেও যেতে পারে না এবং তার পরেও থাকতে পারে না। ২২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কোন সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট কালের অগ্রে যেতে পারে না। এবং পশ্চাতেও থকাতে পারে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কোন জাতিই তার নির্ধারিত কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, বিলম্বিতও করতে পারে না।
তাফসীরঃ
২২. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যে ব্যক্তির ধ্বংসের জন্য যে কাল নির্দিষ্ট করেছেন, তারা তাকে আগ-পাছ করতে পারে না।
৪৪
ثُمَّ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرَىٰ ۖ كُلَّ مَا جَاءَ أُمَّةً رَّسُولُهَا كَذَّبُوهُ ۚ فَأَتْبَعْنَا بَعْضَهُم بَعْضًا وَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ ۚ فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ
ছু ম্মা আর ছাল না-রুছুলানা-তাতরা- ‘কুল্লামা-জাআ উম্মাতার রাছূলুহা-কাযযাবূহু ফাআতবা‘না-বা‘দাহুম বা‘দাওঁ ওয়া জা‘আলনা-হুম আহা-দীছা ফাবু‘দাল লিকাওমিল লা-ইউ’মিনূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর আমি আমার রাসূলগণকে পাঠাতে থাকি একের পর এক। যখনই কোন সম্প্রদায়ের কাছে তাদের রাসূল এসেছে, তারা অবশ্যই তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। সুতরাং আমিও তাদের একের পর এককে ধ্বংস করে দেই এবং তাদেরকে পরিণত করি কিস্সা-কাহিনীতে। অতএব অভিশাপ সেই সম্প্রদায়ের প্রতি, যারা ঈমান আনে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এরপর আমি একাদিক্রমে আমার রসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন উম্মতের কাছে তাঁর রসূল আগমন করেছেন, তখনই তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এক ধ্বংস করেছি এবং তাদেরকে কাহিনীর বিষয়ে পরিণত করেছি। সুতরাং ধ্বংস হোক অবিশ্বাসীরা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর আমি একের পর এক আমার রাসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন জাতির নিকট তার রাসূল এসেছে তখনই এরা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছে। এরপর আমি এদের একের পর এককে ধ্বংস করলাম। আমি এদেরকে কাহিনীর বিষয় করেছি। সুতরাং ধ্বংস হোক অবিশ্বাসীরা!
৪৫
ثُمَّ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ وَأَخَاهُ هَارُونَ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِينٍ
ছু ম্মা আর ছাল না-মূছা-ওয়া আখা-হু হা-রূনা বিআ-য়া-তিনা-ওয়া ছুলতা-নিম মুবীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর আমি মূসা ও তার ভাই হারূনকে আমার নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর আমি মূসা ও হারুণকে প্রেরণ করেছিলাম আমার নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট সনদসহ,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর আমি আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ মূসা ও তার ভাই হারূনকে পাঠাইলাম,
৪৬
إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا عَالِينَ
ইলা-ফিরআওনা ওয়া মালাইহী ফাছতাকবারূওয়া কা-নূকাওমান ‘আ-লীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
ফির‘আউন ও তার সরদারদের কাছে পাঠালাম। কিন্তু তারা অহংকার প্রদর্শন করল। বস্তুত তারা ছিল এক দাম্ভিক সম্প্রদায়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ফেরআউন ও তার অমাত্যদের কাছে। অতঃপর তারা অহংকার করল এবং তারা উদ্ধত সম্প্রদায় ছিল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ফির‘আওন ও তার পারিষদবর্গের নিকট। কিন্তু এরা অহংকার করল; এরা ছিল উদ্ধত সম্প্রদায়।
৪৭
فَقَالُوا أَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُونَ
ফাকা-লূআনু’মিনুলিবাশারাইনি মিছলিনা-ওয়া কাওমুহুমা-লানা-‘আ-বিদূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর তারা বলল, আমরা কি আমাদেরই মত দু’জন মানুষের প্রতি ঈমান আনব, অথচ তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করছে? ২৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বললঃ আমরা কি আমাদের মতই এ দুই ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব; অথচ তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলল, ‘আমরা কি এমন দুই ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব যারা আমাদেরই মত এবং যাদের সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে ?’
তাফসীরঃ
২৩. হযরত মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালামের কওম ছিল বনী ইসরাঈল। ফির‘আউন তাদেরকে গোলাম বানিয়ে রেখেছিল।
৪৮
فَكَذَّبُوهُمَا فَكَانُوا مِنَ الْمُهْلَكِينَ
ফাকাযযাবূহুমা-ফাকা-নূমিনাল মুহলাকীন।
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads1)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এভাবে তারা তাদেরকে অস্বীকার করল এবং শেষ পর্যন্ত তারাও ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তারা উভয়কে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর এরা তাদেরকে অস্বীকার করল, ফলে এরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হল।
৪৯
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ
ওয়া লাকাদ আ-তাইনা-মূছাল কিতা-বা লা‘আল্লাহুম ইয়াহতাদূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর আমি মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, যাতে তারা হেদায়াত লাভ করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ পায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম যাতে এরা সৎপথ পায়।
৫০
وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ آيَةً وَآوَيْنَاهُمَا إِلَىٰ رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَمَعِينٍ
ওয়া জা‘আলনাবনা মারয়ামা ওয়া উম্মাহূ আ-য়াতাওঁ ওয়াআ- ওয়াইনা-হুমা ইলারবওয়াতিন যা-তি কারা-রিওঁ ওয়া মা‘ঈন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং আমি মারয়ামের পুত্র ও তার মাকে (অর্থাৎ হযরত ঈসা ও মারয়াম আলাইহিমাস সালামকে) বানিয়েছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদেরকে এমন এক উচ্চভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, যা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং যেখানে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ পানি। ২৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং আমি মরিয়ম তনয় ও তাঁর মাতাকে এক নিদর্শন দান করেছিলাম। এবং তাদেরকে এক অবস্থানযোগ্য স্বচ্ছ পানি বিশিষ্ট টিলায় আশ্রয় দিয়েছিলাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং আমি মারইয়াম-তনয় ও তার জননীকে করেছিলাম এক নিদর্শন, তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে।
তাফসীরঃ
২৪. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক নিদর্শন স্বরূপ বিনা পিতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জন্মস্থান ছিল বেথেলহাম। বেথেলহামের রাজা তাঁর ও তাঁর মায়ের শত্রু হয়ে গিয়েছিল। তাই তাদের আত্মগোপনের জন্য এমন একটা জায়গা দরকার ছিল, যা রাজার নজরদারির বাইরে। কুরআন মাজীদ বলছে, আমি তাদেরকে এমন এক উচ্চস্থানে আশ্রয় দিলাম, যা ছিল তাদের জন্য নিরাপদ এবং সেখানে তাঁদের প্রয়োজন সমাধার জন্য ছিল ঝরনার পানি।
৫১
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ۖ إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
ইয়াআইয়ুহার রুছুলুকুলূমিনাততাইয়িবা-তি ওয়া‘মালূসা-লিহান ইন্নী বিমাতা‘মালূনা ‘আলীম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তুসমূহ হতে (যা ইচ্ছা) খাও ও সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আমি সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে রসূলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।
৫২
وَإِنَّ هَـٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ
ওয়া ইন্না হা-যিহীউম্মাতুকুম উম্মাতাওঁ ওয়াহিদাতাওঁ ওয়া আনা-রাব্বুকুম ফাত্তাকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত এটাই তোমাদের দীন, (সকলের জন্য) একই দীন! আর আমি তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং আমাকে ভয় কর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনাদের এই উম্মত সব তো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এবং তোমাদের এই যে জাতি এটা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর।’
৫৩
فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ زُبُرًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
ফাতাকাততা‘ঊআমরাহুম বাইনাহুম ঝুবুরান কুল্লুহিঝবিম বিমা-লাদাইহিম ফারিহূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে (বিবাদ-বিসম্বাদে লিপ্ত হয়ে) তাদের দীনকে বহু খণ্ডে বিভক্ত করে ফেলল। প্রতিটি দল নিজেদের ভাবনা মতে যে পন্থা অবলম্বন করেছে তা নিয়েই উৎফুল্ল। ২৫
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর মানুষ তাদের বিষয়কে বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত হচ্ছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।
তাফসীরঃ
২৫. অর্থাৎ মৌলিকভাবে সমস্ত নবীর দীন ছিল একই। তারা একই ‘আকীদা-বিশ্বাসের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন, হালাল খাদ্য গ্রহণ ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং সৎকর্ম অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে পার্থক্য ছিল কেবল শাখাগত বিষয়ে অর্থাৎ প্রত্যেকের শরীআত ছিল আলাদা। মৌলিক বিষয়ে যে পার্থক্য, তা মানুষেরই সৃষ্টি। তারাই পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত হয়ে আলাদা-আলাদা আকীদা-বিশ্বাস তৈরি করে নিয়েছে আর এভাবে বিভিন্ন দল তৈরি হয়ে কেউ হয়েছে ইয়াহুদী, কেউ খ্রিস্টান, কেউ মাজূসী কিংবা বৌদ্ধ, পৌত্তলিক ইত্যাদি। সকলে যদি যথাযথভাবে নবীগনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলত, তবে বিশ্বব্যাপী দীন বলতে কেবল ইসলামই থাকত এবং সকলেই হত মুসলিম। -অনুবাদক
৫৪
فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّىٰ حِينٍ
ফাযারহুম ফী গামরাতিহিম হাত্তা-হীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং (হে রাসূল!) তাদেরকে নির্দিষ্ট এক কাল পর্যন্ত নিজেদের অজ্ঞতার ভেতর নিমজ্জিত থাকতে দাও।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব তাদের কিছু কালের জন্যে তাদের অজ্ঞানতায় নিমজ্জত থাকতে দিন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুতরাং কিছুকালের জন্যে এদেরকে স্বীয় বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও।
৫৫
أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُم بِهِ مِن مَّالٍ وَبَنِينَ
আইয়াহছাবূনা আন্নামা-নুমিদ্দুহুম বিহী মিম মা-লিওঁ ওয়া বানীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা কি মনে করে আমি তাদেরকে যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা কি মনে করে যে, আমি এদেরকে সাহায্যস্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি, তা দিয়ে
৫৬
نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ۚ بَل لَّا يَشْعُرُونَ
নুছা-রি‘উ লাহুম ফিল খাইরা-তি বাল লা-ইয়াশ‘উরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তা দ্বারা তাদের কল্যাণ সাধনে ত্বরা দেখাচ্ছি? ২৬ না, বরং (প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে) তাদের কোন অনুভূতি নেই।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাতে করে তাদেরকে দ্রুত মঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছি? বরং তারা বোঝে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এদের জন্যে সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি ? না, এরা বুঝে না।
তাফসীরঃ
২৬. কাফেরগণ দাবি করত তারাই সঠিক পথে আছে আর তারা প্রমাণ হিসেবে বলত, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ধনে-জনে সম্পন্নতা দান করেছেন। এর দ্বারা বোঝা যায় তিনি আমাদের প্রতি খুশী। ফলে আগামীতেও তিনি আমাদেরকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে রাখবেন। তিনি নারাজ হলে এমন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আমাদেরকে দিতেন না। এটা প্রমাণ করে আমরাই সত্যের উপর আছি। এ আয়াতে তাদের সে দাবির জবাব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, দুনিয়ায় অর্থ-সম্পদের প্রাপ্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি প্রমাণ করে না। কেননা তিনি কাফের ও নাফরমানকেও রিযক দান করেন। বস্তুত তিনি খুশী কেবল সেই সকল লোকের প্রতি যারা ৫৭ থেকে ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারী। তিনি তাদেরকে উৎকৃষ্ট পরিণাম দান করবেন।
৫৭
إِنَّ الَّذِينَ هُم مِّنْ خَشْيَةِ رَبِّهِم مُّشْفِقُونَ
ইন্নাল লাযীনা হুম মিন খাশইয়াতি রাব্বিহিম মুশফিকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই যারা নিজ প্রতিপালকের ভয়ে ভীত
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত,
৫৮
وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম বিআ-য়া-তি রাব্বিহিম ইউ’মিনূন।
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads2)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতসমূহে ঈমান রাখে
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে,
৫৯
وَالَّذِينَ هُم بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ
ওয়াল্লাযীনা হুম বিরাব্বিহিম লা-ইউশরিকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং যারা নিজ প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করে না
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে শরীক করে না,
৬০
وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَىٰ رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ
ওয়াল্লাযীনা ইউ’তূনা মাআ-তাওঁ ওয়া কুলূবুহুম ওয়াজিলাতুনআন্নাহুমইলা-লাব্বিহিম রাজি‘উন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং যারা যে-কোন কাজই করে, তা করার সময় তাদের অন্তর এই ভয়ে ভীত থাকে যে, তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে, ২৭
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে,
তাফসীরঃ
২৭. অর্থাৎ, সৎকর্ম করছে বলে তাদের অন্তরে অহমিকা দেখা দেয় না; বরং তারা এই ভেবে ভীত-কম্পিত থাকে যে, তাদের কর্মে এমন কোন ত্রুটি রয়ে যায়নি তো, যা আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে!
৬১
أُولَـٰئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ
উলাইকা ইউছা-রি‘উনা ফিল খাইরা-তি ওয়া হুম লাহা-ছা-বিকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারাই কল্যাণার্জনে তৎপরতা প্রদর্শন করছে এবং তারাই সে দিকে অগ্রসর হচ্ছে দ্রুতগতিতে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা এতে অগ্রগামী হয়।
৬২
وَلَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۖ وَلَدَيْنَا كِتَابٌ يَنطِقُ بِالْحَقِّ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
ওয়ালা-নুকালিলফুনাফছান ইল্লা-উছ‘আহা-ওয়া লাদাইনা-কিতা-বুইঁ ইয়ানতিকুবিলহাক্কি ওয়া হুম লা-ইউজলামূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত কাজের দায়িত্ব দেই না। আমার কাছে আছে এক কিতাব, যা (সকলের অবস্থা) যথাযথভাবে বলে দেবে এবং তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন করি না। আমার এক কিতাব আছে, যা সত্য ব্যক্ত করে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি কাউকেও তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করি না এবং আমার নিকট আছে এক কিতাব যা সত্য ব্যক্ত করে এবং এদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
৬৩
بَلْ قُلُوبُهُمْ فِي غَمْرَةٍ مِّنْ هَـٰذَا وَلَهُمْ أَعْمَالٌ مِّن دُونِ ذَٰلِكَ هُمْ لَهَا عَامِلُونَ
বাল কুলূবুহুম ফী গামরাতিম মিন হা-যা-ওয়া লাহুম ‘আমা-লুমমিনদূনি যা-লিকা হুম লাহা-‘আ-মিলূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কিন্তু তাদের অন্তর এ বিষয়ে উদাসীনতায় নিমজ্জিত। এছাড়া তাদের আরও বহু দুষ্কর্ম আছে, যা তারা করে থাকে। ২৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
না, তাদের অন্তর এ বিষয়ে অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন, এ ছাড়া তাদের আরও কাজ রয়েছে, যা তারা করছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বরং এই বিষয়ে এদের অন্তর অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন, এতদ্ব্যতীত তাদের আরও কাজ আছে যা এরা করে থাকে।
তাফসীরঃ
২৮. অর্থাৎ, কুফর ও শিরক ছাড়াও তাদের বহু দুষ্কর্ম আছে, যা তারা করে থাকে।
৬৪
حَتَّىٰ إِذَا أَخَذْنَا مُتْرَفِيهِم بِالْعَذَابِ إِذَا هُمْ يَجْأَرُونَ
হাত্তাইযাআখাযনা -মুতরাফীহিম বিলআযা-বি ইযা-হুম ইয়াজআরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অবশেষে আমি যখন তাদের ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করব, তখন তারা আর্তনাদ করে উঠবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এমনকি, যখন আমি তাদের ঐশ্বর্যশালী লোকদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করব, তখনই তারা চীৎকার জুড়ে দেবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর আমি যখন এদের ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিদেরকে শাস্তি দিয়ে ধৃত করি তখনই এরা আর্তনাদ করে উঠে।
৬৫
لَا تَجْأَرُوا الْيَوْمَ ۖ إِنَّكُم مِّنَّا لَا تُنصَرُونَ
লা-তাজআরুল ইয়াওমা ইন্নাকুম মিন্না-লা-তুনসারূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এখন আর্তনাদ করো না। আমার পক্ষ হতে তোমরা কোন সাহায্য পাবে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অদ্য চীৎকার করো না। তোমরা আমার কাছ থেকে নিস্কৃতি পাবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাদেরকে বলা হবে, ‘আজ আর্তনাদ কর না, তোমরা আমার সাহায্য পাবে না।’
৬৬
قَدْ كَانَتْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَكُنتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ تَنكِصُونَ
কাদ কা-নাত আ-য়া-তী তুতলা-আলাইকুম ফাকুনতুম ‘আলাআ’কা-বিকুম তানকিসূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমার আয়াতসমূহ তোমাদেরকে পড়ে শোনানো হত। কিন্তু তোমরা পিছন ফিরে সরে পড়তে
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ শোনানো হত, তখন তোমরা উল্টো পায়ে সরে পড়তে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমার আয়াত তো তোমাদের নিকট আবৃত্তি করা হত, কিন্তু তোমরা পিছনে ফিরে সরে পড়তে-
৬৭
مُسْتَكْبِرِينَ بِهِ سَامِرًا تَهْجُرُونَ
মুছতাকবিরীনা বিহী ছা-মিরান তাহজুরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অত্যন্ত অহমিকার সাথে এ সম্পর্কে (অর্থাৎ কুরআন সম্পর্কে) রাতের বেলা বেহুদা গল্প-গুজব করতে। ২৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অহংকার করে এ বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করে যেতে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
দম্ভভরে, এই বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করতে করতে।
তাফসীরঃ
২৯. بِهٖ সর্বনাম দ্বারা কুরআন মাজীদকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অহমিকা বশে তারা কুরআনের প্রতি তো ঈমান আনতই না, উল্টো রাতের বেলা পবিত্র কাবার চত্বরে বসে কুরআন সম্পর্কে বাজে কথাবার্তায় মেতে উঠত। কেউ বলত এটা জাদু, কেউ বলত কবিতা এবং আরও কত কি। অথবা ’بِهٖ‘ দ্বারা পবিত্র কাবাকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র কাবার পড়শী ও তার সেবায়েত এই অহংকারে তারা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত। سَامِرًا تَهْجُرُوْنَ -এর আরেক অর্থ হতে পারে এক গল্পকারকে ত্যাগ করছ’, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিস থেকে এমন অবজ্ঞাভরে উঠে যেত, যেন কোন গল্পকারকে ত্যাগ করছে। -অনুবাদক
৬৮
أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوا الْقَوْلَ أَمْ جَاءَهُم مَّا لَمْ يَأْتِ آبَاءَهُمُ الْأَوَّلِينَ
আফালাম ইয়াদ্দাব্বারুল কাওলা আম জাআহুম মা-লাম ইয়া’তি আ-বাআ হুমুল আওওয়ালীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কি তারা এ বাণীর ভেতর চিন্তা করেনি নাকি তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আসেনি?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব তারা কি এই কালাম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? না তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তবে কি এরা এই বাণী অনুধাবন করে না? বা এদের নিকট কি এমন কিছু এসেছে যা এদের পূর্বপুরুষদের নিকট আসে নাই ?
৬৯
أَمْ لَمْ يَعْرِفُوا رَسُولَهُمْ فَهُمْ لَهُ مُنكِرُونَ
আম লাম ইয়া‘রিফূরাছুলাহুম ফাহুম লাহূমুনকিরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নাকি তারা তাদের রাসূলকে (আগে থেকে) চিনত না, ফলে তাকে অস্বীকার করছে? ৩০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
না তারা তাদের রসূলকে চেনে না, ফলে তারা তাঁকে অস্বীকার করে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অথবা এরা কি এদের রাসূলকে চিনে না বলে তাকে অস্বীকার করে ?
তাফসীরঃ
৩০. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সততা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে কোন ব্যক্তির যদি জানা না থাকত তবে তার অন্তরে তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দেওয়ার কিংবা তার নবুওয়াতের বিষয়টি বুঝতে বিলম্ব হওয়ার অবকাশ ছিল। কিন্তু মক্কাবাসী তো চল্লিশ বছর যাবৎ তাঁর সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে পরিচিত। তারা তাঁর উন্নত আখলাক-চরিত্র দেখে অভ্যস্ত। তারা নিশ্চিতভাবে জানে, তিনি জীবনে কখনও মিথ্যা বলেননি, কখনও কাউকে ধোঁকা দেননি। তা সত্ত্বেও তারা তাঁকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করছে, যেন তারা তাঁকে চেনেই না এবং তাঁর আখলাক-চরিত্র সম্পর্কে কিছু জানেই না।
৭০
أَمْ يَقُولُونَ بِهِ جِنَّةٌ ۚ بَلْ جَاءَهُم بِالْحَقِّ وَأَكْثَرُهُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ
আম ইয়াকূলূনা বিহী জিন্নাতুম বাল জাআহুম বিলহাক্কিওয়া আকছারুহুম লিলহাক্কি কা-রিহূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নাকি তারা বলে, সে (অর্থাৎ রাসূল) উন্মাদগ্রস্ত? না, বরং (প্রকৃত ব্যাপার হল) সে তাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছে এবং তাদের অধিকাংশ সত্য পছন্দ করে না। ৩১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
না তারা বলে যে, তিনি পাগল ? বরং তিনি তাদের কাছে সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অথবা এরা কি বলে যে, সে উন্মাদনাগ্রস্ত, বস্তুত সে এদের নিকট সত্য এনেছে এবং এদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।
তাফসীরঃ
৩১. মক্কার কাফেরগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেন অস্বীকার করত? তিনি কি অভিনব কোন বিষয় নিয়ে এসেছিলেন, যা পূর্ববর্তী নবীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা? তাঁর মহান আখলাক-চরিত্র কি তাদের অজ্ঞাত ছিল? নাকি তারা সত্যি সত্যি মনে করত তিনি (নাউযুবিল্লাহ) একজন উন্মাদ? না, এর কোনওটিই তাদের অস্বীকৃতির কারণ নয়। বরং প্রকৃত কারণ ছিল অন্য। তিনি যে সত্যের বাণী নিয়ে এসেছিলেন তা তাদের ইচ্ছা-অভিরুচির বিপরীত ছিল। তা গ্রহণ করলে ইন্দ্রিয়পরবশ হয়ে চলা যেত না। তাই তাঁকে অস্বীকার করার জন্য একেকবার একেক বাহানা দেখাত।
৭১
وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ بَلْ أَتَيْنَاهُم بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَن ذِكْرِهِم مُّعْرِضُونَ
ওয়ালা বিততাবা‘আল হাক্কুআহওয়াআহুম লাফাছাদাতিছ ছামা-ওয়া-তুওয়াল আরদ ওয়া মান ফীহিন্না বাল আতাইনা-হুম বিযিকরিহিম ফাহুম ‘আন যিকরিহিম মু‘রিদূ ন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সত্য যদি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুগামী হত, তবে আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং এতে বসবাসকারী সবকিছুই বিপর্যস্ত হয়ে যেত। প্রকৃতপক্ষে আমি তাদের কাছে তাদের উপদেশবাণী নিয়ে এসেছি, কিন্তু তারা নিজেদের উপদেশবাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সত্য যদি তাদের কাছে কামনা-বাসনার অনুসারী হত, তবে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। বরং আমি তাদেরকে দান করেছি উপদেশ, কিন্তু তারা তাদের উপদেশ অনুধাবন করে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সত্য যদি এদের কামনা-বাসনার অনুগামী হত তবে বিশৃংখল হয়ে পড়ত আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং এদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুই। পক্ষান্তরে আমি এদেরকে দিয়েছি উপদেশ, কিন্তু এরা উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৭২
أَمْ تَسْأَلُهُمْ خَرْجًا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيْرٌ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
আম তাছআলুহুম খারজান ফাখারা-জুরাব্বিকা খাইরুওঁ ওয়া হুওয়া খাইরুর রা-ঝিকীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নাকি (তাদের অস্বীকৃতির কারণ এই যে,) তুমি তাদের কাছে কোন প্রতিদান চাও? কিন্তু (এটাও তো গলদ। কেননা) তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত প্রতিদানই (তোমার পক্ষে) উৎকৃষ্ট। তিনি শ্রেষ্ঠতম রিযিকদাতা। ৩২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
না আপনি তাদের কাছে কোন প্রতিদান চান? আপনার পালনকর্তার প্রতিদান উত্তম এবং তিনিই রিযিকদাতা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অথবা তুমি কি এদের নিকট কোন প্রতিদান চাও ? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।
তাফসীরঃ
৩২. এর দ্বারা মক্কার মুশরিকদের তিরস্কার করা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে তো তারা জ্ঞাত, তারা জানে তাঁর জ্ঞান-বুদ্ধিতে কোন ত্রুটি নেই, সেদিক থেকে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, বলিষ্ঠ ও অসাধারণ। তিনি যে বিষয়ের দিকে ডাকছেন তাও সত্য সরল ও সুস্পষ্ট। আবার এ দাওয়াতের কারণে তিনি তাদের কাছে কোন বিনিময়েরও প্রত্যাশা করেন না এবং তা প্রত্যাশা করার কোন প্রশ্নও আসে না, যেহেতু আল্লাহ তাআলা দোজাহানের যে নি‘আমত তাকে দান করেছেন তা মানুষের পক্ষ হতে কল্পনীয় সকল বিনিময় অপেক্ষা অতুলনীয়ভাবে শ্রেয়। তা সত্ত্বেও তারা কী কারণে ঈমান না এনে কেবল শত্রুতাই করে যাচ্ছে? -অনুবাদক
৭৩
وَإِنَّكَ لَتَدْعُوهُمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
ওয়া ইন্নাকা লাতাদ‘ঊহুম ইলা-সিরা-তিম মুছতাকীম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত তুমি তাদেরকে ডাকছ সরল পথের দিকে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আপনি তো তাদেরকে সোজা পথে দাওয়াত দিচ্ছেন;
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি তো এদেরকে সরল পথে আহ্বান করছো।
৭৪
وَإِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ عَنِ الصِّرَاطِ لَنَاكِبُونَ
ওয়া ইন্নাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি ‘আনিসসিরা-তিলানা-কিবূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা আখেরাতে বিশ্বাস রাখে না, তারা তো পথ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আর যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারা সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারা তো সরল পথ হতে বিচ্যুত,
৭৫
۞ وَلَوْ رَحِمْنَاهُمْ وَكَشَفْنَا مَا بِهِم مِّن ضُرٍّ لَّلَجُّوا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
ওয়া লাও রাহিমনা-হুম ওয়াকাশাফনা-মা-বিহিম মিন দুররিল লালাজজুফী তুগইয়া-নিহিম ইয়া‘মাহূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি যদি তাদের প্রতি দয়া করি এবং তারা যে দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত আছে তা দূর করে দেই, তবুও তারা বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের অবাধ্যতায় গোঁ ধরে থাকে। ৩৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যদি আমি তাদের প্রতি দয়া করি এবং তাদের কষ্ট দূর করে দেই, তবুও তারা তাদের অবাধ্যতায় দিশেহারা হয়ে লেগে থাকবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি এদেরকে দয়া করলেও এবং এদের দুঃখ-দৈন্য দূর করলেও এরা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিতে থাকবে।
তাফসীরঃ
৩৩. মক্কার মুশরিকদেরকে ঝাকুনি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দু’-একবার দুর্ভিক্ষ ও অর্থসঙ্কটে ফেলেছিলেন। এ আয়াতের ইশারা সে দিকেই।
৭৬
وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ
ওয়া লাকাদ আখাযনা-হুম বিল’আযা-বি ফামাছতা কা-নূ লিরাব্বিহিম ওয়ামাইয়াতাদাররা‘ঊন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তো তাদেরকে (একবার) শাস্তিতে ধৃত করেছিলাম। তখনও তারা নিজ প্রতিপালকের সামনে নত হয়নি এবং তারা তো কোন রকম অনুনয়-বিনয় করে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের পালনকর্তার সামনে নত হল না এবং কাকুতি-মিনুতিও করল না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তো এদেরকে শাস্তি দিয়ে ধৃত করলাম, কিন্তু এরা এদের প্রতিপালকের প্রতি বিনত হল না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না।
৭৭
حَتَّىٰ إِذَا فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا ذَا عَذَابٍ شَدِيدٍ إِذَا هُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ
হাত্তাইযা-ফাতাহনা-‘আলাইহিম বা-বান যা-‘আযা-বিন শাদীদিন ইযা-হুম ফীহি মুবলিছূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অবশেষে যখন আমি তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দুয়ার খুলে দেব, তখন সহসা তারা তাতে হতাশ হয়ে পড়বে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অবশেষে যখন আমি তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দ্বার খুলে দেব, তখন তাতে তাদের আশা ভঙ্গ হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অবশেষে যখন আমি এদের জন্যে কঠিন শাস্তির দুয়ার খুলে দেই তখনই এরা এতে হতাশ হয়ে পড়ে।
৭৮
وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۚ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
ওয়া হুওয়ল্লাযীআনশাআলাকুমুছ ছাম‘আ ওয়াল আবসা-রা ওয়াল আফইদাতা কালীলাম মা-তাশকুরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহই তো সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তর সৃষ্টি করেছেন, (কিন্তু) তোমরা বড় কমই শুকর আদায় কর। ৩৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি তোমাদের কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা খুবই অল্প কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই তোমাদের জন্যে কর্ণ, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।
তাফসীরঃ
৩৪. এখান থেকে আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শনের কথা বর্ণনা করছেন। এসব নিদর্শনকে মক্কার কাফেরগণও স্বীকার করত। এর দ্বারা প্রমাণ করা উদ্দেশ্য যে, যেই মহিয়ান সত্তা এ রকম মহা বিস্ময়কর কাজ করতে সক্ষম, তিনি মানুষের মৃত্যু ঘটানোর পর তাদেরকে পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না?
৭৯
وَهُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
ওয়া হুওয়াল্লাযী যারা-আকুম ফিল আরদিওয়া ইলাইহি তুহশারূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই তো তোমাদেরকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তারই কাছে তোমাদেরকে একত্র করা হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে রেখেছেন এবং তারই দিকে তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট একত্র করা হবে।
৮০
وَهُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ وَلَهُ اخْتِلَافُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
ওয়া হুওয়াল্লাযী ইউহয়ী ওয়া ইউমীতুওয়ালাহুখতিলা-ফুল লাইলি ওয়ান্নাহা-রি আফালাতা’কিলূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। রাত ও দিনের পরিবর্তন তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। তবুও কি তোমরা বুদ্ধি কাজে লাগাবে না?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং দিবা-রাত্রির বিবর্তন তাঁরই কাজ, তবু ও কি তোমরা বুঝবে না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তাঁরই অধিকারে রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তন। তবুও কি তোমরা বুঝবে না ?
৮১
بَلْ قَالُوا مِثْلَ مَا قَالَ الْأَوَّلُونَ
বাল কা-লূমিছলা মা-কা-লাল আওওয়ালূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বরং তারাও সে রকম কথাই বলে, যেমন বলেছিল পূর্বেকার লোকে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বরং তারা বলে যেমন তাদের পূর্ববর্তীরা বলত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এতদসত্ত্বেও এরা বলে, যেমন বলেছিল পূর্ববর্তীরা।
৮২
قَالُوا أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ
কা-লূআইযা-মিতনা-ওয়া কুন্না-তুরা-বাওঁ ওয়া ‘ইজা-মান আইন্না-লামাব‘উছূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলে, আমরা যখন মারা যাব এবং মাটি ও অস্থিতে পরিণত হব, তখনও কি আমাদেরকে পুনর্জীবিত করে তোলা হবে?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বলেঃ যখন আমরা মরে যাব এবং মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হব, তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হব ?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলে, ‘আমাদের মৃত্যু ঘটলে ও আমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলেও কি আমরা উত্থিত হব?
৮৩
لَقَدْ وُعِدْنَا نَحْنُ وَآبَاؤُنَا هَـٰذَا مِن قَبْلُ إِنْ هَـٰذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ
লাকাদ উ‘ইদনা-নাহনুওয়া আ-বাউনা-হা-যা-মিন কাবলুইন হা-যাইল্লাআছাতীরুল আওওয়ালীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এই প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয়েছে আমাদেরকে এবং পূর্বে আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও। বস্তুত এটা পূর্ববর্তীদের তৈরি করা উপকথা ছাড়া কিছুই নয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতীতে আমাদেরকে এবং আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এই ওয়াদাই দেয়া হয়েছে। এটা তো পূর্ববতীদের কল্প-কথা বৈ কিছুই নয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমাদেরকে তো এই বিষয়েই প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে এবং অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষগণকেও। এটা তো সে কালের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।’
৮৪
قُل لِّمَنِ الْأَرْضُ وَمَن فِيهَا إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
কুল লিমানিল আরদুওয়া মান ফীহাইন কুনতুম তা‘লামূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে রাসূল! তাদেরকে) বল, এই পৃথিবী এবং এতে যারা বাস করছে তারা কার মালিকানায়, যদি তোমরা জান?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
জিজ্ঞাসা কর, ‘এই পৃথিবী এবং এতে যারা আছে তারা কার, যদি তোমরা জান ?’
৮৫
سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
ছাইয়াকূলূনা লিল্লা-হি কুল আফালা-তাযাক্কারূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহর। ৩৫ বল, তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এখন তারা বলবেঃ সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলবে, ‘আল্লাহ্ র ’। বল, ‘তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না ?’
তাফসীরঃ
৩৫. আরবের অবিশ্বাসীগণ এটা স্বীকার করত যে, আসমান, যমীন ও এর বাসিন্দাদের মালিক আল্লাহ তাআলাই। তা সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন মাবুদে বিশ্বাসী ছিল।
৮৬
قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
কুল মার রাব্বুছছামা-ওয়া-তিছছাব‘ই ওয়া রাব্বুল ‘আরশিল ‘আজীম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বল, কে সাত আকাশের মালিক এবং মহা আরশের মালিক?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলুনঃ সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
জিজ্ঞাসা কর, ‘কে সপ্ত আকাশ এবং মহা‘র্আশের অধিপতি ?’
৮৭
سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ
ছাইয়াকূলূনা লিল্লা-হি কুল আফালা-তাত্তাকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা অবশ্যই বলবে, এসব আল্লাহর। বল, তবুও কি তোমরা (আল্লাহকে) ভয় করবে না?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এখন তারা বলবেঃ আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলবে, ‘আল্লাহ্’। বল, ‘তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না ?’
৮৮
قُلْ مَن بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
কুল মাম বিইয়াদিহী মালাকূতুকুল্লি শাইয়িওঁ ওয়া হুওয়া ইউজীরু ওয়ালা-ইউজা-রু ‘আলাইহি ইন কুনতুম তা‘লামূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বল, কে তিনি, যার হাতে সবকিছুর পূর্ণ কর্তৃত্ব এবং যিনি আশ্রয় দান করেন এবং তার বিপরীতে কেউ কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না (বল) যদি জান?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলুনঃ তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃক যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না ?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
জিজ্ঞাসা কর, ‘সকল কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁহার ওপর আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জান ?’
৮৯
سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ فَأَنَّىٰ تُسْحَرُونَ
ছাইয়াকূলূনা লিল্লা-হি কুল ফাআন্না-তুছহারূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা অবশ্যই বলবে, (সমস্ত কর্তৃত্ব) আল্লাহর। বল, তবে কোথা হতে তোমরা যাদুগ্রস্ত হচ্ছ? ৩৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এখন তারা বলবেঃ আল্লাহর। বলুনঃ তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলবে, ‘আল্লাহ্ র ’। বল, ‘তবুও তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্ত হতেছ ?’
তাফসীরঃ
৩৬. আয়াতে তাদের বিভ্রান্তিকে যাদুগ্রস্ততার সাথে তুলনা করা হয়েছে। যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি সঠিক বিষয় বুঝতে পারে না, তাই উল্টাপাল্টা কথা বলে, তারাও তেমনি মহাবিশ্বে আল্লাহ তাআলার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও আধিপত্য এবং তার জ্ঞান ও শক্তির অসীমত্ব জানা থাকা সত্ত্বেও এই সহজ কথাটা বুঝতে পারছে না যে, এমন সর্বশক্তিমানের পক্ষে মানুষকে তাদের মাটিতে মিশে যাওয়ার পরও পুনরুজ্জীবিত করা কিছু কঠিন কাজ নয়। উল্টো মন্তব্য করছে যে, এসব পুরাকালের উপকথা। -অনুবাদক
৯০
بَلْ أَتَيْنَاهُم بِالْحَقِّ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
বাল আতাইনা-হুম বিলহাক্কিওয়া ইন্নাহুম লাকা-যিবূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
না, (এটা উপকথা নয়); বরং আমি তাদের কাছে সত্য পৌঁছিয়েছি। কিন্তু তারা তো মিথ্যাবাদী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কিছুই নয়, আমি তাদের কাছে সত্য পৌঁছিয়েছি, আর তারা তো মিথ্যাবাদী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বরং আমি তো এদের নিকট সত্য পৌঁছেছি; কিন্তু এরা তো নিশ্চিত মিথ্যাবাদী।
৯১
مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِن وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَـٰهٍ ۚ إِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَـٰهٍ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ
মাততাখাযাল্লা-হু মিওঁ ওয়ালাদিওঁ ওয়ামা-কা-না মা‘আহূমিন ইলা-হিন ইযাল লাযাহাবা কুল্লুইলা-হিম বিমা-খালাকা ওয়া লা‘আলা-বা‘দুহুম ‘আলা-বা‘দিন ছুবহা-নাল্লা-হি ‘আম্মা-ইয়াসিফূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তার সঙ্গে নেই অন্য কোন মাবুদ। সে রকম হলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ মাখলুক নিয়ে পৃথক হয়ে যেত, তারপর তারা একে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার করত। ৩৭ তারা যা বলে, তা হতে আল্লাহ পবিত্র,
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নাই এবং তাঁর সঙ্গে অপর কোন ইলাহ্ নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত। এরা যা বলে তা হতে আল্লাহ্ কত পবিত্র!
তাফসীরঃ
৩৭. তাওহীদের এ রকম দলীলই সূরা বনী ইসরাঈল (১৭ : ৪২) ও সূরা আম্বিয়ায় (২১ : ২২) গত হয়েছে। এর ব্যাখ্যার জন্য সেসব আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।
৯২
عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘আ-লিমিল গাইবি ওয়াশশাহা-দাতি ফাতা‘আ-লা-‘আম্মা-ইউশরিকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(সেই আল্লাহ), যিনি যাবতীয় গুপ্ত ও প্রকাশ্য বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। সুতরাং তিনি তাদের শিরক থেকে বহু উর্ধ্বে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী। তারা শরীক করে, তিনি তা থেকে উর্ধ্বে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, এরা যাকে শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।
৯৩
قُل رَّبِّ إِمَّا تُرِيَنِّي مَا يُوعَدُونَ
কুররাব্বি ইম্মা-তুরিইয়ান্নী মা-ইউ‘আদূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে রাসূল!) বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদেরকে (অর্থাৎ কাফেরদেরকে) যে আযাবের ধমকি দেওয়া হচ্ছে, আপনি যদি আমার চোখের সামনেই তা নিয়ে আসেন
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! যে বিষয়ে তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা যদি আমাকে দেখান,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হচ্ছে, তুমি যদি তা আমাকে দেখেতে চাও,
৯৪
رَبِّ فَلَا تَجْعَلْنِي فِي الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
রাব্বি ফালা-তাজ‘আলনী ফিল কাউমিজ্জা-লিমীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ওই জালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে আমার পালনকর্তা! তবে আপনি আমাকে গোনাহগার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত করবেন না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে জালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত কর না।’
৯৫
وَإِنَّا عَلَىٰ أَن نُّرِيَكَ مَا نَعِدُهُمْ لَقَادِرُونَ
ওয়া ইন্না-‘আলাআননুরিইয়াকা মা-না‘ইদুহুম লাকা-দিরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি তাদেরকে যে বিষয়ে ধমক দিচ্ছি, তা তোমার চোখের সামনেই ঘটাতে আমি অবশ্যই সক্ষম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি তাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছি, তা আপনাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি তাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি আমি তা তোমাকে দেখেতে অবশ্যই সক্ষম।
৯৬
ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ۚ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ
ইদফা‘ বিল্লাতী হিইয়া আহছানুছ ছাইয়িআতা নাহনুআ‘লামুবিমা-ইয়াসিফূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সে সময় না আসছে) তুমি মন্দকে প্রতিহত করবে এমন পন্থায়, যা হবে উৎকৃষ্ট। ৩৮ তারা যেসব কথা বলছে, তা আমি ভালোভাবে জানি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মন্দের জওয়াবে তাই বলুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মন্দের মুকাবিলা কর যা উত্তম তা দিয়ে; এরা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
তাফসীরঃ
৩৮. অর্থাৎ তাদের অসার কথাবার্তা এবং তারা যে দুঃখ-কষ্ট দেয়, যতদূর সম্ভব নম্রতা, সদাচরণ ও চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা তার জবাব দিন।
৯৭
وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ
ওয়া কুর রাব্বি আ‘ঊযুবিকা মিন হামাঝা-তিশশাইয়া-তীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং দোয়া কর, হে আমার প্রতিপালক! আমি শয়তানদের প্ররোচনা হতে আপনার আশ্রয় চাই।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বল, ‘হে আমার প্রতি-পালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা হতে,
৯৮
وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ
ওয়া আ‘ঊযুবিকা রাব্বি আইঁ ইয়াহদু রূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই যাতে তারা আমার কাছেও আসতে না পারে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট এদের উপস্থিতি হতে।’
৯৯
حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ
হাত্তাইযা-জাআ আহাদাহুমুল মাওতুকা-লা রাব্বির জি‘ঊন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
পরিশেষে যখন তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন তারা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ওয়াপস পাঠিয়ে দিন
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যখন এদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় প্রেরণ কর,
১০০
لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّا ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا ۖ وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
লা‘আললীআ‘মালুসা-লিহান ফীমা-তারাকতুকাল্লা- ইন্নাহা-কালিমাতুন হুওয়া কাইলুহা- ওয়ামিওঁ ওয়ারাইহিম বারঝাখুন ইলা-ইয়াওমি ইউব‘আছূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যাতে আমি যা (অর্থাৎ যে দুনিয়া) ছেড়ে এসেছি সেখানে গিয়ে সৎকাজ করতে পারি। কখনও না। এটা একটা কথার কথা, যা সে মুখে বলছে মাত্র। তাদের (অর্থাৎ মৃতদের) সামনে রয়েছে ‘বরযখ’ ৩৯ যা তাদেরকে পুনরুত্থিত করার দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করি নাই।’ না, এটা হওয়ার নয়। এটা তো এর একটি উক্তি মাত্র। এদের সামনে বারযাখ থাকবে উত্থান দিবস পর্যন্ত।
তাফসীরঃ
৩৯. মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মৃত ব্যক্তি যে জগতে থাকে, তাকে ‘বরযখ’ বলে। আয়াতে বলা হচ্ছে, মৃতদেরকে তাদের কথার জবাবে বলা হবে, মৃত্যুর পর এখন আর তোমাদের দুনিয়ায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কেননা তোমাদের সামনে রয়েছে বরযখের বাধা। এ বাধা কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। [ورائه শব্দটি যেমন ‘পিছন’ অর্থে আসে, তেমনি ‘সম্মুখ’ অর্থেও আসে]
১০১
فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ
ফাইযা- নুফিখা ফিসসূরি ফালা আনছা-বা বাইনাহুম ইয়াওমায়িযিওঁ ওয়ালাইয়াতাছাআলূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর যখন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, তখন তাদের মধ্যকার কোন আত্মীয়তা বাকি থাকবে না এবং কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করবে না। ৪০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্নীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, এবং একে অপরের খোঁজ-খবর নিবে না,
তাফসীরঃ
৪০. দুনিয়ায় আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব একে অন্যের খোঁজ-খবর নেয়, কেমন আছে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কিয়ামতের অবস্থা এমনই বিভীষিকাময় হবে যে, প্রত্যেকে নিজের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কারও খবর নেওয়ার মত অবকাশ কারও হবে না।
১০২
فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
ফামান ছাকুলাত মাওয়া-ঝীনুহূফাউলাইকা হুমুল মুফলিহূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তখন যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম,
১০৩
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَـٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ
ওয়া মান খাফফাত মাওয়া-ঝীনুহূফাউলাইকাল্লাযীনা খাছিরূআনফুছাহুম ফী জাহান্নামা খালিদূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই এমন, যারা নিজেদের জন্য লোকসানের ব্যবসা করেছিল। তারা সদা-সর্বদা জাহান্নামে থাকবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা দোযখেই চিরকাল বসবাস করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; এরা জাহান্নামে স্থায়ী হবে।
১০৪
تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ
তালফাহুউজূহাহুমুন্না-রু ওয়া হুম ফীহা-কা-লিহূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আগুন তাদের চেহারা ঝলসে দেবে এবং তাতে তাদের আকৃতি বিকৃত হয়ে যাবে। ৪১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আগুন তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারন করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অগ্নি এদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং এরা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়;
তাফসীরঃ
৪১. আগুনে ঝলসে তাদের চেহারা এমনই বীভৎস হয়ে যাবে যে, তাদের উপরের ঠোঁট কুঞ্চিত হয়ে মাথার তালুতে পৌঁছে যাবে, নিচের ঠোঁট ঝুলে নাভি পর্যন্ত নেমে আসবে এবং মাঝখানে বিশাল-বিকট দাঁত বের হয়ে আসবে। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। -অনুবাদক
১০৫
أَلَمْ تَكُنْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ
আলাম তাকুন আ-য়া-তী তুতলা-‘আলাইকুম ফাকুনতুম বিহা-তুকাযযি বূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(তাদেরকে বলা হবে) তোমাদেরকে কি আমার আয়াতসমূহ পড়ে শোনানো হত না? কিন্তু তোমরা তা অবিশ্বাস করতে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের সামনে কি আমার আয়াত সমূহ পঠিত হত না? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হত না ? অথচ তোমরা সেই সকল অস্বীকার করতে।
১০৬
قَالُوا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ
কা-লূরাব্বানা-গালাবাত ‘আলাইনা-শিকওয়াতুনা-ওয়াকুন্না-কাওমান দাল্লীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর আমাদের দুর্ভাগ্য ছেয়ে গিয়েছিল এবং আমরা ছিলাম বিপথগামী সম্প্রদায়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দূর্ভাগ্যের হাতে পরাভূত ছিলাম এবং আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রান্ত সম্প্রদায়;
১০৭
رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ
রাব্বানাআখরিজনা-মিনহা-ফাইন ‘উদনা-ফাইন্না-জা-লিমূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এখান থেকে উদ্ধার করুন। অতঃপর পুনরায় যদি আমরা সেই কাজই করি, তবে অবশ্যই আমরা জালেম হব।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে আমাদের পালনকর্তা! এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা গোনাহগার হব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে আমাদের প্রতিপালক! এই অগ্নি হতে আমাদেরকে উদ্ধার কর; এরপর আমরা যদি পুনরায় কুফরী করি তবে তো আমরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী হব।’
১০৮
قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ
কা-লাখছাঊ ফীহা-ওয়ালা-তুকালিলমূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বলবেন, এরই মধ্যে তোমরা হীন অবস্থায় পড়ে থাক এবং আমার সাথে কথা বলো না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ বলবেন, ‘তোরা হীন অবস্থায় এখানে থাক্ এবং আমার সঙ্গে কোন কথা বলিস্ না।’
১০৯
إِنَّهُ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
ইন্নাহূ কা-না ফারীকুম মিন ‘ইবা-দী ইয়াকূ লূনা রাব্বানা আ-মান্না-ফাগফিরলানাওয়ারহামনা-ওয়াআনতা খাইরুর রা-হিমীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমার বান্দাদের একটি দল দোয়া করত, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমার বান্দাদের একদলে বলতঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমার বান্দাগণের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও দয়া কর, তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
১১০
فَاتَّخَذْتُمُوهُمْ سِخْرِيًّا حَتَّىٰ أَنسَوْكُمْ ذِكْرِي وَكُنتُم مِّنْهُمْ تَضْحَكُونَ
ফাত্তাখাযতুমূহুম ছিখরিইইয়ান হাত্তাআনছাওকুম যিকরী ওয়া কুনতুম মিনহুম তাদহাকূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা তখন তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিলে। এমনকি তা (অর্থাৎ তাদেরকে উত্ত্যক্তকরণ) তোমাদেরকে আমার স্মরণ পর্যন্ত ভুলিয়ে দিয়েছিল। আর তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় লিপ্ত থাকতে। ৪২
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর তোমরা তাদেরকে ঠাট্টার পাত্ররূপে গ্রহণ করতে। এমনকি, তা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল এবং তোমরা তাদেরকে দেখে পরিহাস করতে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে।’
তাফসীরঃ
৪২. অর্থাৎ, তোমাদের অপরাধ কেবল ‘হক্কুল্লাহ’র অমর্যাদা করাই নয়; বরং নেক বান্দাদের প্রতি জুলুম করে হক্কুল ইবাদও পদদলিত করেছিলে। তোমাদেরকে তো এ দিনের ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু সে সতর্কবাণীকে উপহাস করেছিলে। সুতরাং আজ তোমাদের প্রতি কোন দয়া করা হবে না। তোমরা দয়ার উপযুক্ত থাকনি।
১১১
إِنِّي جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوا أَنَّهُمْ هُمُ الْفَائِزُونَ
ইন্নী জাঝাইতুহুমুল ইয়াওমা বিমা-সাবারূ আন্নাহুম হুমুল ফাইঝূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা যে সবর করেছিল সে কারণে আজ আমি তাদেরকে এমন প্রতিদান দিলাম যে, তারাই হয়ে গেল কৃতকার্য।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।’
১১২
قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِينَ
কা-লা কাম লাবিছতুম ফিল আরদি‘আদাদা ছিনীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(তারপর) আল্লাহ (জাহান্নামীদেরকে) বলবেন, তোমরা পৃথিবীতে বছরের গণনায় কত কাল থেকেছ?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করলে বছরের গণনায়?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্ বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বৎসর অবস্থান করেছিলে ?’
১১৩
قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ الْعَادِّينَ
কা-লূলাবিছনা-ইয়াওমান আও বা‘দা ইয়াওমিন ফাছআলিল ‘আ-দ্দীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা বলবে, আমরা এক দিন বা এক দিনেরও কম থেকেছি। ৪৩ (আমাদের ভালো মনে নেই) কাজেই যারা (সময়) গুনেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা বলবে, আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন বা দিনের কিছু অংশ; আপনি না হয়, গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞাসা করুন।’
তাফসীরঃ
৪৩. আখেরাতের শাস্তি অতি কঠিন হওয়ার কারণে জাহান্নামীদের কাছে দুনিয়ার সুখণ্ডশান্তিকে সম্পূর্ণ নাস্তি মনে হবে এবং গোটা ইহকাল একদিন বা তারও কম অনুভূত হবে।
১১৪
قَالَ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا ۖ لَّوْ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
কা-লা ইল লাবিছতুম ইল্লা-কালীলাল লাও আন্নাকুম কুনতুম তা‘লামূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ বলবেন, তোমরা অল্পকালই থেকেছিলে। কতই না ভালো হত যদি এ বিষয়টা তোমরা (আগেই) বুঝতে! ৪৪
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা তাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরা জানতে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি বলবেন, ‘তোমরা অল্প কালই অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে!
তাফসীরঃ
৪৪. অর্থাৎ, এখন তো তোমরা নিজেরাই দেখলে দুনিয়ার জীবন এক দিন না হোক, আখেরাতের তুলনায় অতি সামান্যই তো ছিল। এ কথাই তো তোমাদেরকে দুনিয়ায় বলা হত, কিন্তু তোমরা তো মানতে প্রস্তুত ছিলে না। আহা! এ সত্য যদি তোমরা তখনই বুঝতে তবে আজ তোমাদের এ পরিণতি হত না।
১১৫
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ
আফাহাছিবতুম আন্নামা-খালাকনা-কুম আবাছাওঁ ওয়া আন্নাকুম ইলাইনা-লা-তুরজা‘ঊন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তবে কি তোমরা মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অহেতুক সৃষ্টি করেছি ৪৫ এবং তোমাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না ?’
তাফসীরঃ
৪৫. যারা আখেরাতের জীবন এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে স্বীকার করে না, তারা যেন বলতে চাচ্ছে, আল্লাহ তাআলা এ জগতকে অহেতুক ও উদ্দেশ্যহীন সৃষ্টি করেছেন। কাজেই এখানে যা ইচ্ছা করতে পারবে। অন্য কোন জগতে এ জগতের কোন কাজের প্রতিফল ভোগ করতে হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বে ঈমান রাখে ও তাঁর হিকমতকে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এরূপ ভ্রান্ত ও বালখিল্য ধারণা পোষণ তার পক্ষে সম্ভবই নয়। কাজেই আখেরাতের প্রতি ঈমান আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমানের এক যৌক্তিক ও অনিবার্য দাবি।
১১৬
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
ফাতাআ-লাল্লা-হুল মালিকুল হাক্কু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া, রাব্বুল ‘আরশিল কারীম।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতি মহিমময় আল্লাহ, যিনি প্রকৃত বাদশাহ। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব শীর্ষ মহিমায় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মহিমান্বিত আল্লাহ্ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; সম্মানিত র্আশের তিনি অধিপতি।
১১৭
وَمَن يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَـٰهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِندَ رَبِّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ
ওয়া মাইঁ ইয়াদ‘উ মা‘আল্লা-হি ইলা-হান আ-খারা লা-বুরহা-না লাহূবিহী ফাইন্নামাহিছা-বুহূ‘ইনদা রাব্বিহী ইন্নাহূলা-ইউফলিহুল কা-ফিরূন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদকে ডাকে, যে সম্পর্কে তার কাছে কোন রকম দলীল-প্রমাণ নেই, তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে। জেনে রেখ, কাফেরগণ সফলকাম হতে পারে না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার সনদ নেই, তার হিসাব তার পালণকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ র সঙ্গে ডাকে অন্য ইলাহ্কে, এই বিষয়ে তার নিকট কোন সনদ নেই; তার হিসেব তার প্রতিপালকের নিকট আছে; নিশ্চয়ই কাফিররা সফলকাম হবে না।
১১৮
وَقُل رَّبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
ওয়া কুর রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুররা-হিমীন।
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে রাসূল!) বল, হে আমার প্রতিপালক, আমার ত্রুটিসমূহ ক্ষমা কর ও দয়া কর। তুমি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
বলূনঃ হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা কর ও দয়া কর, তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
আরো পড়ুন :-
স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন
দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল
(ads1)
(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)